একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালি জাতিকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে একুশে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, “কারও কাছে হাত পেতে নয়, ভিক্ষা করে নয়; আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। কারণ একুশ আমাদের শিখিয়েছে মাথা নত না করতে। মাথা নত করে আমরা চলব না, মাথা উঁচু করে চলব।”
অনুষ্ঠানে জাতীয় জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২১ জন ব্যক্তির মাঝে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার “একুশে পদক-২০২৪” তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতা আমাদের শুধু স্বাধীনতাই দিয়ে যাননি, তিনি সেই সঙ্গে আমাদের একটা মর্যাদাবোধ দিয়ে গেছেন। বিজয়ী জাতি হিসেবে সারা বিশ্বে আমরা মাথা উঁচু করেই চলতে চাই। এই কথাটা সকলকে মনে রাখতে হবে।”
সরকারপ্রধান বলেন, “আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। সামনে আমাদের লক্ষ্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা। সবাই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তাদের দক্ষতা ও কর্মশক্তি যাতে বিকশিত করতে পারে সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা সমাজের উন্নয়নের জন্য কাজ করি। এখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশিষ্ট অবদান যারা রেখেছেন তাদেরকে যতদূর সম্ভব আমরা সম্মাননা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যারা ভাষা, সাহিত্য, শিল্প, কলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন তাদেরকে পুরস্কৃত করতে পেরে আমরা ধন্য হয়েছি এবং তাদেরকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন।”
এ বছর একুশে পদক পেয়েছেন ২১ জন। যাদের একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্তঘেঁষা ভোলাহাট উপজেলার মুসরিভূজা গ্রামের বাসিন্দা জিয়াউল হক (৯১)। দই বিক্রির টাকায় তিনি গড়ে তুলেছেন লাইব্রেরি ও একটি বিদ্যায়তন। এছাড়া স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দেওয়াসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অনুদান দেন জিয়াউল হক।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে জিয়াউল হকের সমাজসেবামূলক কাজের প্রশংসা করেন এবং পাঠাগরের জন্য একটি ভবন নির্মাণ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। তার প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি সরকারিকরণের ব্যবস্থা করা যায় কি-না সে উদ্যোগও নেবেন বলে জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, “জিয়াউল হককে পুরস্কৃত করতে পেরে আমরা আনন্দিত এই জন্য যে, আমরা সারা বাংলাদেশে যদি খোঁজ করি এরকম বহু গুণিজন পাব। হয়তো দারিদ্রের কারণে না হয় কোনো সামাজিক কারণে নিজেদের মেধা বিকাশের সুযোগ পাননি। কিন্তু সমাজকে কিছু তারা দিয়েছেন, মানুষকে দিয়েছেন, সেটাই সবচেয়ে বড় কথা। তারা মানুষের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করেছেন। যে অর্থ তিনি উপার্জন করেছেন তা দিয়ে আরো ভালোভাবে বাঁচতে পারতেন, জীবনকে গড়ে তুলতে পারতেন। কিন্তু, নিজের উন্নতি বা ভোগ-বিলাসের দিকে না তাকিয়ে তিনি জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন যারা লেখাপড়া করতে পারছে না তাদের জন্য।”
প্রধানমন্ত্রী যারা সমাজের উচ্চস্তরে আছেন তাদেরকে এই ধরণের ত্যাগী মানুষগুলোকে খুঁজে বের করারও কথা বলেন।
তিনি বলেন, “একাত্তরের পরাজিত শক্তি যেমন পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল, তেমনি স্বাধীনতাসহ সব অর্জন, এমনকি ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতার অবদানকেও মুছে দিতে চেয়েছিল।”