আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ব্যতিক্রমী আয়োজনে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানালো নড়াইলবাসী। লাখো প্রদীপ জ্বালিয়ে স্মরণ করা হলো ভাষা শহীদদের। সন্ধ্যায় নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ মাঠে হয় এই আয়োজন। উদ্যোক্তারা জানালেন, তরুণ প্রজন্মকে দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা দিতেই তাঁদের এই আয়োজন।
‘অন্ধকার থেকে মুক্ত করুক একুশের আলো’-এই স্লোগানে প্রতিবছরের মতো এবারও সূর্যাস্তের সাথে সাথে শুরু হয় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন। একদিকে চলে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের গণসংগীত আর ভাষা শহীদদের স্মরণে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ মাঠে লাখো প্রদীপ প্রজ্জ্বলন। মুহূর্তেই অন্ধকার ছাপিয়ে সুবিশাল মাঠটি হয়ে ওঠে আলোকিত। মোমবাতির আলোর মধ্য দিয়ে শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বাংলা বর্ণমালা, আল্পনা, পাখিসহ গ্রাম-বাংলার নানা ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। ওড়ানো হয় রঙিন ফানুস।
আলোর বর্ণিল ছটায় আলোকিত হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের প্রতিকৃতি, শহিদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বিভিন্ন বর্ণমালা, আলপনাসহ গ্রাম বাংলার নানা ঐহিত্যবাহী নকশা। দৃষ্টি নন্দন এসব নকশা জেলা থেকে আগত দর্শনার্থীরা উপভোগ করেন।
বুধবার একুশের সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে একুশের আলো উদযাপন পর্ষদ-২০২৪ আয়োজিত প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের উদ্বোধন করেন নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী, নড়াইল পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান, নড়াইল পৌর মেয়র আনজুমান আরা, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু, একুশের আলোর সহ-সভাপতি ওমর ফারুক, সাধারণ সম্পাদক কচি খন্দকার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মলয় কুন্ডু।
উদ্বোধনের পূর্বে বিকেল থেকে গণসঙ্গীত, আবৃতি, কবিতা পাঠ ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশনা করেন স্থানীয় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের শিল্পীরা। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি…, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…সহ বিভিন্ন গান পরিবেশনের মাধ্যমে আয়োজন আকর্ষণীয় করে তোলেন।
ভাষাশহিদদের স্মরণে নড়াইলে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন ১৯৯৭ সালে শুরু হয় নড়াইলের সুলতান মঞ্চ চত্ত্বরে। প্রতি বছর একুশের সন্ধ্যায় স্মরণ করা হয় ভাষাশহিদদের।
দর্শনার্থী আবদুল্লাহ আল মারজান বলেন, ‘এক লাখ মোমবাতি জ্বালিয়ে ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন দেশের আর কোথাও দেখিনি। নড়াইলবাসীদের এ আয়োজন সারা দেশকে আলোকিত করবে বলে আমি মনে করি। হাজারো নারী-পুরুষ, শিশু, বয়োবৃদ্ধ সব শ্রেণির মানুষের মিলনমেলার মধ্যে দিয়ে ভাষাশহিদদের স্মরণ করা হলো, যা ভাষায় প্রকাশ সম্ভব নয়। বাংলাদেশের অন্য কোনো জেলায় এত বড় আয়োজন হয় বলেও শুনিনি।’