বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করতে আমেরিকা আগ্রহী বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। রোববার ঢাকা সফররত মার্কিন প্রতিনিধিদলের সাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষে তিনি একথা জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে র‌্যাব কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আমেরিকার প্রতি আবারও আহবান জানানো হয়েছে। তবে নির্বাচন নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলর ডিরেক্টর এলিন লাউবাক জানান, সম্পর্ক এগিয়ে নিতেই তারা ঢাকা সফরে এসেছেন।

তিনদিনের সফরে শনিবার ঢাকা এসেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির বিশেষ সহকারী ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল-এনএসসি’র ডিরেক্টর এলিন লাউবাক, ইউএসএআইডি’র এশিয় বিষয়ক ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মাইকেল শিফার এবং ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তার।

সফরের দিতীয় দিন রোববার বিকেলে তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান। সেখান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে এলিন লাউবাক জানান, বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক আরো এগিয়ে নিতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত জানান। বলেন, বৈঠকে র‌্যাবের কয়েক কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে এবং বঙ্গবন্ধুর খুনী রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বৈঠকে নির্বাচন বা রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতেই আলোচনা হয়েছে।

এইলিন লুবাখার তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সাংবাদিকদের বলেন, ‘অভিন্ন বিষয়গুলোতে আমাদের অগ্রাধিকার এবং ভবিষ্যতে একসঙ্গে কাজের ক্ষেত্রে সহযোগিতার উপায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে।’

বৈঠক শেষে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস এক পৃথক বার্তায় বলে, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নিরাপত্তা, শরণার্থী, জলবায়ু, শ্রম ও বাণিজ্যসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমাদের দুই দেশ কীভাবে কাজ করতে পারে তানিয়ে আমরা (বাংলাদেশের) পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বাংলাদেশ।’

র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পাঁচটি পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশ অনুসরণ করবে।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশ এবং এই অঞ্চলের জন্য নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করেছে। আমরা এ বিষয়েও আলোচনা করেছি।’

যুক্তরাষ্ট্রকে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।

যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম খুনি রাশেদ চৌধুরী প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি মার্কিন প্রতিনিধি দলের কাছে উত্থাপন করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিষয়টি মার্কিন বিচার বিভাগের অধীনে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিন মার্কিন কর্মকর্তা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ‘কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে পারস্পরিক স্বার্থের অগ্রগতির জন্য একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এগিয়ে নেওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা করতে’ এই সফর করছেন।

তারা পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শ্রমিক নেতা, যুবকর্মী এবং মুক্ত ও অবাধ গণমাধ্যম তৈরির কাজে নিয়োজিতদের সঙ্গেও বৈঠক করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মার্কিন কর্মকর্তাদের সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরও গভীর ও সম্প্রসারিত হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যে চিঠি দিয়েছেন– তা দুই দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।