ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি রোববারের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। ওই হেলিকপ্টারে থাকা ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, একজন প্রাদেশিক গভর্নরসহ ৯ আরোহীর সবাই মারা গেছেন। দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় একটি পাহাড়ি এলাকায় হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার ১৮ ঘন্টা পর ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে।

এ ঘটনায় ইরানজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্ব নেতারা ইরানের প্রেসেিডন্টের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন। এই শোকাবহ ঘটনায় ইরানের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে না বলে জানিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা।

ইরানের উত্তরাঞ্চলে আজারবাইজান সীমান্ত সংলগ্ন জোলফা শহরে একটি বাঁধ উদ্বোধন করে ফেরার পথে রোববার স্থানীয় সময় দুপুরে ঘন কুয়াশা ও প্রবল বৃষ্টির মুখে পড়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট  ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার। আমেরিকার তৈরি বেল টু ওয়ান টু মডেলের এই হেলিকপ্টারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমিরাব্দুল্লাহিয়ান ও ইরানের উত্তর আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নরসহ মোট ৯জন আরোহী ছিলেন। হেলিকপ্টারটি উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। খারাপ আবহওয়ায় দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয় বলে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম প্রাথমিক খবরে জানায়। তবে প্রেসিডেন্টের বহরের অপর দুটি হেলিকপ্টার প্রাদেশিক রাজধানী তাবরিজ শহরে নিরাপদে পৌঁছে।

নিখোঁজ ও বিধ্বস্ত হওয়ার প্রায় ১৮ ঘন্টা পর উদ্ধারকর্মীরা একটি পাহাড়ে হেলিকপ্টারটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পায়। এরপর ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিহত হওয়ার খবর প্রচার করে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়- আজারবাইজান-ইরান সীমান্তে একটি বাঁধ উদ্বোধন করতেওই শহরে যান ইরানের প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ দেশটির জ্যেষ্ঠ্য কর্মকর্তারা। সেখানে প্রতিবেশি দেশ আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টও এসেছিলেন। টেলিভিশনের ছবিতে দুই প্রেসিডেন্টকে আলাপ করতে দেখা যায়। ফেরার পথে হেলিকপ্টারের ভেতরে বসা ইরানের প্রেসিডেন্টের ছবিও প্রচার করে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। এরপরই স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টায় প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টারটি যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর তিন ঘন্টা পর উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলের দিকে রওনা করে। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে সেখানে পৌঁছাতে তাদের অনেক অবলম্ব হয়। রাতে উদ্ধার কাজ আরও বিঘিœত হয়।

সোমবার সকালে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের সন্ধান পায় ইরানিয়ান রেডক্রিসেন্টের উদ্ধারকারী দল। সেখানে গিয়ে তারা হেলিকপ্টারটির ধ্বংসাবশেষ দেখতে পায়। একটি ড্রোন ফুটেজে দেখা যায় হেলিকপ্টারটির সামনের অংশ পুরোটাই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। শুধু পেছনের কিছু অংশ পড়ে আছে।

এর কিছুক্ষণ পর ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি মারা গেছে। একই সাথে মারা গেছে হেলিকপ্টারে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান, পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রাহমাতি ও এই প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেমসহ অন্য আরোহীরা। ইরানের রেড ক্রিসেন্ট প্রধান বলেছেন, প্রেসিডেন্ট রাইসি এবং তার সাথে থাকা প্রতিনিধি দলের মরদেহগুলো তাবরিজ শহরের দিকে নেয়া হচ্ছে।

এদিকে, গতরাতে হেলিকপ্টার বিধ্বতের খবরের পর থেকে রাইসিদের জন্য তেহরানের ভ্যালি-আসর স্কোয়ারের হাজারো মানুষ জড়ো হয়ে প্রার্থনা করে। প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর খবর পাওয়ায় সেখানে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। জরুরী বৈঠকে বসেছে ইরানের মন্ত্রীসভা।

ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে ইরানের রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে কোনো বিঘœ ঘটবে না বলে জানিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি। তেহরানে এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী অন্তবর্তীকালীন প্রেসিডেন্টর দায়িত্বপালন করবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবের। ৫০ দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির এমন আকস্মিক মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতারসহ বিভিণœ দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান।