১৯৮১ সালের পর থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে হারেনি রিয়াল মাদ্রিদ। ২০২৪ সালে এসেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পারলো না বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড। লন্ডনে আরও একবার রিয়াল মাদ্রিদ প্রমাণ করলো কেনো তারাই ইউরোপিয়ান ফুটবলের রাজা। দ্বিতীয়ার্ধের দুর্দান্ত ফুটবলে ডর্টমুন্ডকে ছিটকে দিয়ে রেকর্ড ১৫তম বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয় করল লস ব্লাঙ্কোসরা।
শনিবার (১ জুন) ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে ২-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। এই ফাইনাল জিতে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন রিয়ালের দুই কিংবদন্তি টনি ক্রুস ও লুকা মদ্রিচ। রিয়ালেরই কিংবদন্তি পাকো গেন্তোর সঙ্গে তারা দুজনও এখন সর্বোচ্চ চ্যাম্পিয়ন্স লিগজয়ী খেলোয়াড়। তিনজনই জিতেছেন ছয়টি করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা।
ফাইনালের শুরু থেকেই দুই দল খেলেছে সাবধানী ফুটবল। অতিমাত্রায় আক্রমণাত্মক ফুটবল দেখা যায়নি কারো দিক থেকেই। যদিও নিজেদের বিখ্যাত ইয়েলো ওয়ালের সামনে বলেই কি না ডর্টমুন্ডকে খানিকটা উজ্জীবিত দেখা গেল শুরুতেই। বল দখলের লড়াইয়ে অবশ্য রিয়াল মাদ্রিদই আধিপত্য দেখিয়েছে। প্রথমার্ধে ৬৩ শতাংশ বল দখলে রাখা আনচেলত্তি শিষ্যদের কাছে বলতে গেলে পাত্তাই পায়নি রিয়াল।
প্রথম এক ঘণ্টায় তৈরি করতে পারেনি বলার মতো কোনো সুযোগ। দ্বিতীয়ার্ধে আস্তে আস্তে নিজেদের গুছিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় রিয়াল মাদ্রিদ।
অথচ প্রথমার্ধে অন্তত তিন গোলের লিড নিতে পারত বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড। গোলমিসের মহড়ায় নিজেদের কপাল পুড়িয়েছে নিজেরাই। ম্যাচ শেষে নিশ্চিতভাবেই সেই আক্ষেপটাই বড় হয়ে থাকবে করিম আদিয়েমি, হুলিয়ান ব্রান্টদের।
প্রথমার্ধের ১৩ মিনিটে দুর্দান্ত এক সুযোগ মিস করেন ডর্টমুন্ডের হুলিয়ান ব্রান্ট। নিকলাস ফুলক্রুগের ব্যাকপাস রিসিভ করেন ডিবক্সের প্রান্তে থেকে। ভেতরে গেলেও ভারসাম্য হারান খানিকটা। দুর্বল শটটা পোস্টে রাখলে পারলে লিডই পেয়ে যেতে পারত ডর্টমুন্ড। ২০ মিনিটের মাথায় আরও বড় সুযোগ মিস করে বসেন ডর্টমুন্ডের করিম আদেয়েমি। গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়াকে একা পেয়েও বল পোস্টে রাখতে পারেননি। মিনিট তিনেক পরেই ফুলক্রুগের পা ছোঁয়া শট ফিরে আসে গোলবার থেকে। যদিও সেটা গোল হলে অফসাইডের ফাঁদে পড়ত কিনা, সেটাও বড় প্রশ্ন।
৩৫ মিনিটে বরুশিয়া গোলরক্ষকের কাছ থেকে বল নিতে গিয়ে তার পায়ে আঘাত করে বসেন ভিনিসিয়ুস। হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। এরপর হলুদ কার্ড দেখেন ডর্টমুন্ডের স্লটারব্যাকও। ৪১ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নেয়া মার্সেল সাবিটজারের জোরালো শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁচান কোর্তোয়া। রিয়ালের ভিনিসিয়ুস, বেলিংহ্যামরা বলার মতো ভালো সুযোগ তৈরি করতে পারেননি। ফলে প্রথমার্ধে গোলশূন্য ড্র নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে রিয়াল। ৪৯ মিনিটে টনি ক্রুসের শট বরুশিয়া গোলরক্ষক কোবেল আটকে দেন, এরপর দানি কার্ভাহালের হেড বারের ওপর দিয়ে চলে যায়।৫৭ মিনিটে পোস্টের খুব কাছে থেকে কার্ভাহালের হাফভলি আটকে যায় বরুশিয়ার রক্ষণে। বল চলে যায় গোলরক্ষকের কাছে। ৬৩ মিনিটে আরেকবার রিয়ালকে বাঁচান কোর্তোয়া। আদেমির ক্রস থেকে পাওয়া বল ফুলক্রুগ ঝাঁপিয়ে পড়ে হেড করলে কোনোমতে পাঞ্চ করে ফিরিয়ে দেন বেলজিয়ান গোলরক্ষক। ৬৯ মিনিটে ব্যাক পোস্টে ভিনিসিয়ুসের ক্রস একটুর জন্য স্পর্শ করতে পারেননি বেলিংহ্যাম। পেলে হয়তো গোল হয়ে যেতো।
তবে এরপর রিয়ালকে অপেক্ষা করতে হয়নি বেশি সময়। ৭৪ মিনিটে দলকে উচ্ছ্বাসে ভাসান কার্ভাহাল। ভিনিসিয়ুস আদায় করে নেন রিয়াল। টনি ক্রুসের মাপা ক্রস ছয় গজ বক্সের মধ্যে লাফিয়ে উঠে হেডে বল জালে জড়িয়ে দেন দানি কার্ভাহাল (১-০)। ৭৮ মিনিটে ভিনিসিয়ুসের কাটব্যাক বাইলাইনে পেয়ে বেলিংহ্যাম টাচ করলেও কাজে লাগাতে পারেননি। দুই মিনিট পর বিপজ্জনক জায়গা থেকে ক্রুসের ফ্রি কিক ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকান বরুশিয়া গোলরক্ষক কোবেল।
৮৩ মিনিটে নিজেদের ভুলে আরেক গোল হজম করে ডর্টমুন্ড। ডিফেন্ডার ইয়ান ম্যাটসন লেফট ব্যাক পজিশন থেকে ভুল পাসে বল দিয়ে বসেন বেলিংহ্যামকে। ইংলিশ এই তারকা এক ঝলকে সেই বল পাঠিয়ে দেন বাঁদিকে থাকা ভিনিসিয়ুসকে। দূরের পোস্ট দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দিতে ভুল করেননি ভিনি (২-০)।
এর চার মিনিট পর বক্সের মধ্যে দারুণ হেডে কোর্তোয়াকে পরাস্ত করে উচ্ছ্বাসে মেতেছিলেন বরুশিয়ার ফুলক্রুগ। কিন্তু অফসাইডের কারণে সেই গোল বাতিল হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের জয়েই নিজেদের ১৫তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা নিশ্চিত করে রিয়াল মাদ্রিদ।