বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে ইজিবাইক চালক আশিক মিয়া হত্যা মামলায় তার স্ত্রীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও তার প্রেমিকসহ তিন জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। বগুড়ার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হাবিবা মন্ডল মঙ্গলবার (৪ জুন) বিকালে জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো- বগুড়ার সারিয়াকান্দির কুটিবাড়ি গ্রামের ছফু খাঁর ছেলে শিবলু ফকির (২৫), রামনগর গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলাম তরফদারের ছেলে শান্ত মিয়া (২৫) ও আমতলী দক্ষিণপাড়া গ্রামের তরিকুল মন্ডলের ছেলে নাঈম মন্ডল (২৬)। তাদের দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। নিহতের স্ত্রী মিনা বেগমকে (২৫) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ছাড়াও দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, মৃত আশিক মিয়ার সঙ্গে চার বছর আগে মিনা বেগমের বিয়ে হয়। এ দম্পতির মহিন (৩) নামের একটি ছেলে আছে। এদিকে আসামি ফুফাতো ভাই শিবলুর সঙ্গে মিনা বেগমের পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে বিষয়টি জানাজানি হয় এবং তার স্বামীর চোখেও পড়ে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এ ঘটনার জের ধরে ২০২০ সালের ২ অক্টোবর পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আসামিরা আশিককে ডেকে নিয়ে শ্বাসরোধ এবং গোপনাঙ্গে আঘাত করে হত্যা করা হয়। পরে এসিড দিয়ে মুখ পুড়িয়ে নদীতে লাশ ফেলে দেওয়া হয়।
ঘটনার দুদিন পর ৪ অক্টোবর সারিয়াকান্দি উপজেলার ছাগলধরা গ্রামে বাঙালি নদী থেকে আশিকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরের দিন নিহতের ভাই আনিছ উদ্দিন বাদী হয়ে সাজাপ্রাপ্ত চারজনকে আসামি করে সারিয়াকান্দি থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর পরই আসামিদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দেন। পুলিশ তদন্ত শেষে ওই চারজকে অভিযুক্ত করে ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে তিনবছর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে আদালত রায় ঘোষণা করে। মামলায় আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাড. মন্তেজার রহমান. অ্যাড. আবু বক্কর সিদ্দিক. অ্যাড. বাবলু।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (এপিপি) আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, সমাজের স্বাভাবিক নীতি যারা নষ্ট করে নৈতিক মূল্যবোধ ভাঙ্গতে চায় এ রায় তাদের জন্য দৃষ্টান্ত। রায়ে বাদীপক্ষ সন্তুষ্ট।