গত ১৫ বছরে জোর করে ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ওলামা দলের আলোচনাসভায় তিনি এ অভিযোগ করেন। ভারতের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুর বলেন, সেদেশে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত বলেই লোকসভার নির্বাচনে তার প্রতিফলন ঘটেছে।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে মাঠে নামতে দেওয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে ফখরুল আরও বলেন, ‘আমাদের লাখ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা; ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ২৮ অক্টোরের পরে দুই-তিন দিনের মধ্যে ২৭ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যখনই আমরা আন্দোলন করি, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় নামি, তখনই তারা একেবারে হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। পুলিশ-র্যাব আক্রমণ করে।’
তিনি বলেন, ‘বেনজীর সাহেব ছিলেন পুলিশ বাহিনী, র্যাবের প্রধান। সব পত্রিকায় যখন তার অপকীর্তি, চুরি-দুর্নীতি বেরিয়ে আসছে, তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেব বলছেন, সে কি আওয়ামী লীগ করে?
‘আওয়ামী লীগে ওনার নাম ছিল কি না জানি না; আওয়ামী লীগকে ডিফেন্ড করার জন্য, ক্ষমতায় রাখার জন্য তিনি সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন। নির্বাচনের সময় তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন যে, সেই সরকারকে ভোট দেবেন যারা উন্নয়ন করছে, উন্নয়ন করতে যাচ্ছে। আমরা উন্নয়নের পক্ষে আছি। তার এই কথাগুলো বলার কথা না কিন্তু কথাগুলো বলেছে। যত রকম করে পারে বিরোধী দলকে নির্যাতন-নিপীড়ন করেছে। বেআইনিভাবে হত্যা করেছে, জুডিশিয়াল কাস্টডিতে হত্যা করেছে, গুম-খুন করেছে এবং মিথ্যা মামলা—এই গায়েবি মামলা সেই সময় তৈরি সব,’ যোগ করেন তিনি।
ফখরুলের ভাষ্য, ‘আরেকজন সাবেক সেনা প্রধান আজিজ। তাকে তারা (আওয়ামী লীগ) অনেককে ডিঙ্গিয়ে, তার দুই ভাই চিহ্নিত সন্ত্রাসী জেনেও সেনা বাহিনীর চিফ করেছিল। তাদের যে কাজ, তারা সেটা করে দিয়েছিল—নির্বাচন পার করে দিয়েছিল।’
‘প্রধানমন্ত্রী কয়দিন আগে বলেছেন সাদা চামড়ার লোকরা নাকি তাকে বলেছে যে, কোনো একটা দেশের এয়ারবেজ করতে দেওয়ার জন্য। সেখানে তাদের জঙ্গি বিমান নামবে। আর বাংলাদেশের একটি অংশ চট্টগ্রাম ও মিয়ানমারকে নিয়ে নতুন একটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্র তৈরি করার তারা চেষ্টা করছে,’ যোগ করেন ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উচিত হবে এই মুহূর্তে জনগণের কাছে এর প্রকৃত ব্যাখ্যা তুলে ধরা। কারা এটা চাইছে? কেন চাইছে? আর আপনারা কেন এতদিন পর প্রকাশ করছেন? এটা আমরা জানতে চাই। কারণ আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন।’
‘আপনাদের হাতে স্বাধীনতা কোনো দিনই নিরাপদ না। আপনাদের এর আগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো বলেই ফেললেন, পাশের একটি দেশের ব্যাপারে যে; তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা যে অন্যায়ভাবে আমাদের সব ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে, সে ব্যাপারে তারা (আওয়ামী লীগ) কিছু করতে পারছে না। আমাদের পানির হিস্যা দেয় না। সীমান্তে আমাদের হত্যা করা হয়, সেই সম্পর্কে একটা টু শব্দ করে না।’
নতুন শিক্ষা কারিকুলামের মাধ্যমে ধর্মহীন রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করা হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে ফখরুল বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্য বইয়ে এমন এমন কারিকুলাম আনছে যা আমার কালচারের বিরুদ্ধে, আমার কৃষ্টির বিরুদ্ধে, আমার ধর্মের বিরুদ্ধে।’