উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে বাড়ছে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ। তিস্তা নদীর ভাঙনও অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে ভাঙনে লালমনিরহাট জেলার কালমাটি, হরিণচড়া, খুনিয়াগাছ, রাজপুর, মহিষখোচা, গোবর্ধন, ভোটমারী সহ ১১টি স্থানের জমিজায়গা ও খেতের ফসল ও বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্ভে চলে যাবার উপক্রম হয়েছে।

সেই সাথে পনি প্রবেশ করছে তিস্তা তীরবর্তি নিম্নাঞ্চল আদিতমারী উপজেলার চরগোবর্ধন, ব্যাপারিপাড়া, হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, সানিয়াজান, কালিগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৌলমারী, চরবৈরাতী সদর উপজেলার হরিণচড়া, কালমটিসহ বেশকিছু এলাকায়।

তিস্তা নদীর পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডালিয়া ব্যারেজর ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়ে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, আজ বুধবার (৩ জুলাই) সকাল ৯টায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার (২ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় এই পানি বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, সিন্ধুর্ণা, ডাউয়াবাড়ি, কালীগঞ্জের শৈলমারী, আদিতমারীর মহিষখোচা, বাহাদুরপাড়া, গোবরধন, সদর উপজেলার রাজপুর, খুনিয়াগাছ এলাকার নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। এসব এলাকার কৃষকরা বিপাকে পড়েছে ফসল ও গবাদিপশু নিয়ে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, আগামী দু’একদিনের মধ্যে তিস্তার পানি আরও বাড়তে পারে। এরপর কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

বর্ষাকাল শুরু হওয়ায় উজানে ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে তাদের অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এই উজানের ঢলে তিস্তার পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টিপাত। ফলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার দিকে এগিয়ে আসছে।

বর্ষা শুরু হলেই বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায় ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। এবারও সেই কাজটিই করা হচ্ছে। টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢেউয়ের কারণে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে চরাঞ্চলের সড়ক পথ। চরবাসীর যাতায়াতের মাধ্যম হয়েছে নৌকা।

টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢেউয়ের কারণে বন্যার শঙ্কা করছেন তিস্তা পাড়ের মানুষ। পানিবন্দি হওয়া ও তা কাটিয়ে ওঠার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন চরবাসী ও নদী তীরবর্তী পরিবারগুলো। নদী পাড়ের মৎস্য চাষিরা তাদের পুকুরের মাছ রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। বন্যা হলে ভেসে যেতে পারে লাখ লাখ টাকার মাছ।

হাতীবান্ধার কিসামত নোহালী চরাঞ্চলের কৃষক আজিজার রহমান বলেন, কয়েকদিন ধরে নদীতে পানি বেড়েছে। চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। নৌকায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। যেভাবে পানি বাড়ছে, তাতে মনে হচ্ছে বড় বন্যা হতে পারে।