সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অনেকটা অবনতি হয়েছে গত দুদিনের ভারি বৃষ্টিতে। বিভিন্ন নদীর পানি গতরাতে বাড়লেও সকাল থেকে পানি আর বাড়েনি। এছাড়া বৃষ্টিপাত কমে আসাতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।

বুধবার সকাল থেকে সুরমাসহ কয়েকটি নদীর পানি বেশির ভাগ পয়েন্টে কমতে শুরু করলেও কুশিয়ারা, মনু ও খোয়াই নদীর পানিবৃদ্ধি সব পয়েন্টে অব্যাহত রয়েছে। উজানের উপজেলাগুলো থেকে পানি নামতে থাকায় ভাটির উপজেলাগুলোর নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

আজ বুধবার (৩ জুলাই) সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি সিলেট, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জসহ ৬টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

তবে উজানের পাহাড়ি ঢলে তৃতীয় দফার বন্যায় প্লাবিত সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা আবারো ভেঙে পড়েছে। বানের পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট। গ্রামীণ সড়কগুলোতে কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও বা কোমর পানি। এছাড়া হাটবাজারগুলো দফায় দফায় বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এদিকে দু’দফার বন্যায় সর্বস্বহারা সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার মানুষ বাড়িঘরে ফিরছেন।

প্রসঙ্গত মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে দু’দফা বন্যায় সিলেটের ১০টি উপজেলা এবং সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার ২৩টি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়। রাস্তাঘাট, বাড়িঘর তলিয়ে ৮ লাখ মানুষ পানি বন্দী জীবনযাপন করতে হয়। অনেক স্থানে বন্যার পানিতে ভেসে গেছে কাঁচা ও আধাপাকা বাড়িঘর।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ কে বলেন, “উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারি বর্ষণের কারণে নদীগুলোতে পানি বেড়েছে। ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি বেশি হলে সিলেটে তার প্রভাব পড়ে।

“গত তিন দিনে চেরাপুঞ্জিতে ৬৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর আমাদের এখানে বৃষ্টি হয়েছে ৩৫০ মিলিমিটার। এ কারণে নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।”

পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেটের বুধবার সকাল ৯টার তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা মঙ্গলবার ছিল বিপৎসীমার ১১২ সেন্টিমিটার ওপরে।

সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগের দিন বইছিল বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে।

কুশিয়ারা নদীর পানি বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা মঙ্গলবার বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

জকিগঞ্জের অমলসিদ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা মঙ্গলবার ছিল বিপৎসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার ওপরে।

ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগের দিন বইছিল বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।

শেরপুর পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগের দিন ছিল বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপরে।

সিলেট আবহাওয়া অফিস বলছে, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ২৫ মিলিমিটার। এর আগে সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ২৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।

সিলেট জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১৩টি উপজেলায় বন্যায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লাখ ১ হাজার ৬৫৮। ১১টি উপজেলায় ১৮৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ৮ হাজার ৩৫১ জন মানুষ।

সিলেটে সবচেয়ে বেশি বন্যা কবলিত উপজেলা ওসমানী নগর। এই উপজেলার ২৭৩টি গ্রামে ১  লাখ ৮২ হাজার মানুষ বন্যা আক্রান্ত রয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষও এই উপজেলায় বেশি। ৬৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে এ মুহূর্তে অবস্থান করছেন ৩ হাজার ১৮১ জন।

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান কে বলেন, “জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি ৬টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানের উপজেলাগুলো থেকে ঢলের পানি নামতে থাকায় ভাটির উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হচ্ছে না।”