উৎপাদন ও সরবরাহের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমাতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দাম কমবে। তবে রাতারাতি কমবে না। একেবারে যুগযুগ সময়ও লাগবে না। আমরা যুক্তিসঙ্গত সময়ে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনবো।
আজ বুধবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কৌশল নির্ধারণ শীর্ষক এক বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এজন্য উৎপাদন, বিপণন ও সরবরাহ চেইনে সহায়তা এবং নজরদারি বাড়ানো হবে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে দুটি বিষয় আছে খাদ্য উৎপাদন এবং সরবরাহ। খাদ্য উৎপাদনে কতগুলো চ্যালেঞ্জ আছে। খাদ্য বলতে আমি মৎস্য, পশুপালন সবগুলো দেখছি। আর সঙ্গে সরবরাহটা। উৎপাদন করলেই তো চলবে না। উৎপাদনের পর গুদামে থেকে যায়।
তিনি বলেন, আমরা কতগুলো জিনিস নিয়ে আলাপ করেছি এবং আমরা অতিদ্রুত অ্যাকশন নেবো। কিন্তু মূল্যস্ফীতি জিনিসটা কতোগুলো কারণে বেশি হয়েছে। চট করে এটা কালকে নেমে যাবে, এটা ঘোড়ার মতো না। ঘোড়ার মাথায় নিচের দড়ি ধরে টান দিলাম আর থেমে গেলো। এটা ডিফিকাল্ট, এটার প্রসেস আছে। তবে একেবারে যুগযুগ লাগবে না, আমরা যুক্তিসঙ্গত সময়ে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনবো।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এরইমধ্যে আপনারা কিছুটা দেখতে পারছেন জিনিসপত্রের দাম কমে আসছে। আমি শুনেছি সবজির দাম কমে আসছে। যে কারণেই হোক। অতএব আমরা আশা করি আমরা যে পদক্ষেপগুলো নিচ্ছি, সংশ্লিষ্ট যারা আছেন অতিদ্রুত পদক্ষেপগুলো নেবেন।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি শুধু জীবন-জীবিকা না, এটার ইনভেস্টমেন্টের একটা ব্যাপার আছে। বিদেশ থেকে মূল্যস্ফীতির রেটটা দেখে। প্রজেক্ট করে তারা কী করবে, তাদের নেট রিটার্ন কেমন হবে। অতএব ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপার। আমরা জরুরি পদক্ষেপ নিচ্ছি।
সিন্ডিকেটের কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়ে অতীতে এমন দেখা গেছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন বলেন, এটি নজরে আনা হয়েছে, কথা হয়েছে। আমাদের নজরে কোনো কিছু এড়ায়নি। আমার কিছুটা আইডিয়া আছে, গভর্নর সাহেবের আইডি আছে, এই যে সচিবরা ওরা কিন্তু অনেক অভিজ্ঞ।
তিনি বলেন, আমরা বলেছি আপনারা (সচিব) ফ্রিলি আমাদের বলবেন। আগের মত ভয় করে, একেবারে প্রথমে এসে তোয়াজ করবেন, স্যার ভালো মানুষ এগুলো কিছু বলবেন না। আমাদের ভুল হলে বলবেন, আপনার কাছে তথ্য থাকলে ফ্র্যাংকলি বলবেন। অতএব আগের মত গোপন- টোপন কিছু থাকবে না। আবার সবকিছু স্বার্থের জন্য ওপেন করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, একজন গভর্নর নিয়োগ দিতে গেলে অনেকগুলো আইনি ব্যাপার আছে। আমরা তিন দিনে সমাধান করেছি। আমি তাড়াতাড়ি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে কেবিনেটে আলোচনা করেছি, মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলেছি। এগুলো অন্য সময় হলে দিতো না। আরও তিন মাস লাগতো কাকে দেবে না দেবে, সেটা ঠিক করতে।
অনেকে ভাবছে সাম্প্রতিক সময় যে সহিংসতা হয়েছে তার কারণে ছাগলকাণ্ডের মতিউরসহ অন্যান্য দুর্নীতির বিষয়গুলো ধামাচাপাড়া পড়ে যেতে পারে। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, কোনো কিছুই ধামাচাপা পড়বে না। এগুলো চলমান থাকবে।
মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রানীতি এ দুটি বিষয় সমন্বয় করে কাজ করবেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নিশ্চয়ই৷ সমন্বয় করেই কাজ করা হবে৷ তবে সমন্বয়হীনতার জন্য অর্থের অপচয় হয়৷ অর্থের অপচয় রোধ করতে হবে এবং অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সেটা দেশি সম্পদ হোক বা বিদেশ থেকে ধার করা হোক৷ এ দুটি ক্ষেত্রেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে। আমরা অর্থের অপচয় করবো না।
পুরোনো পদক্ষেপ নতুন ক্ষেত্র কীভাবে সফল হবে এমন উত্তরে তিনি বলেন, আমরা নিশ্চয়ই নতুন পদক্ষেপ নেবো এবং সে পদক্ষেপের বাস্তবায়ন যাতে হয় সেটা নিশ্চিত করবো। আমরা তো দেখবো যেটা পলিসি আছে সেটা বাস্তবায়ন হয়৷ অনেক জায়গায় দেখেছেন অনেক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হয় না সেটার অনেক কারণ আছে। ডোন্ট ওয়ারি৷ আমরা যেটা নেবো সেটা বাস্তবায়ন করবো। আমরা যতটুকু খেতে পারবো ততটুকুই নেবো৷ ততটকুই বাস্তবায়ন করবো৷
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। নতুন গভর্নর বলেন, ৪-৫ মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।