বৃষ্টি না হওয়ায় দেশের পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও ফেনী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুরসহ বেশির ভাগ জেলায় বাড়িঘর ও সড়ক থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে বানভাসিরা এখন পাহাড়সম দূর্ভোগে পড়েছে। বন্যায় অনেকের কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙ্গে গেছে। পাকা ঘরেও আসবাবপত্রসহ নষ্ট হয়েছে প্রয়োজনীয় সবকিছু। বাড়িতে ফিরলেও তা বসবাসে উপযোগী করাটাই কঠিন চ্যালেঞ্জ এখন।

পরিচিত নিজের ভিটেমাটিটাই যেন অপরিচিত হয়ে উঠেছে দেশের পূর্বাঞ্চলের বন্যাকবলিত ১১ জেলার বেশিরভাগ বানভাসি মানুষের কাছে। বৃষ্টি আর উজানের ঢলে সৃষ্ট হঠাৎ ভয়াবহ বন্যায় অনেকেই এক কাপড়েই বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে ঠাঁই নিয়েছিলো। অনেকেই ঘর বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে না গেলেও চোখের সামনেই বানের পানিতে ভেসে যেতে দেখেছেন তিলে তিলে গড়ে তোলা স্বপ্নে সংসারটাকে।

গেল কয়েকদিনে বৃষ্টি কমে পানি নামতে শুরু করায় অনেক আশা নিয়ে নিজের বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছে বন্যাকবলিত মানুষেরা। কিন্ত বাড়ি ফিরেই আরেক দু:স্বপ্নের মুখোমুখি তারা।সবকিছুই যেন ধ্বংসস্তুপ। কাঁচাঘর ভেঙ্গে গেছে। অনেক বাড়িঘর পাহাড়ি ঢলের কাঁদামাটিতে ভরে গেছে।

যে উঠোনে যত্ন করে হাঁসমুরগীসহ গবাদীপুশু লালন পালন করেছে সেই উঠোনেই ভাঙ্গচোড়া। সাধের গবাদীপুশুও বাঁচাতে পারেননি অনেকেই। নষ্ট হয়ে গেছে দোকানপাট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অনেক কিছুই। কিভাবে বছরের পর বছর গড়া সবকিছু ঠিক হবে তা নিয়েই এখন পাগলপ্রায় অনেকে।

বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী জেলার পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। সদরের ৮টি ইউনিয়নের সব গ্রাম এবং পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার কোথাও কোথাও এখনো পানি রয়েছে। দাগনভূইয়া ও সোনাগাজীতে পানি কমেছে।

গেল কয়েকদিনে কুমিল্লায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। গোমতী নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নেমেছে। গোমতীর বুরবুড়িয়া বাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পানি বের হওয়া অনেকটা কমে আসছে। ফলে কমছে বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার পানিও। এছাড়া প্লাবিত কুমিল্লা জেলার দক্ষিনাঞ্চল লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় বন্যা পানি নেমে যাচ্ছে।

নোয়াখালী সেনবাগ কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে বেগমগঞ্জ সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলার পরিস্থিতি। তবে টানা বৃষ্টিতে মাইজদীর পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

চাঁদপুরে এখনো বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট জলু হয়ে আছে। মৌলভীবাজারে কুশিয়ারা, ধলাই এবং মনু নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুসারে দেশের চারবিভাগে আগামী চার দিনে বৃষ্টিপাতে তেমন সম্ভাবনা নেই। এতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।