বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক প্রতিহিংসাসহ নানা কারণে নিরীহ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলাসমূহ প্রত্যাহারের সুপারিশ করতে সরকার জেলা ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে দু’টি কমিটি গঠন করেছে।
আজ রবিবার (২২শে সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে এ তথ্য জানা যায়।
হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করার জন্য জেলা পর্যায়ের যে কমিটি গঠিত হয়েছে তার সভাপতি হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন জেলা পুলিশ সুপার (মহানগর এলাকার জন্য পুলিশের একজন ডেপুটি কমিশনার) ও জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর (মহানগর এলাকার মামলাসমূহের জন্য মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর)। কমিটির সদস্য-সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।
জেলা পর্যায়ে গঠিত হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ কমিটির কার্যপরিধি ও কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে পরিপত্রটিতে বলা হয়েছে, এটি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের জন্য আগামী ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট-এর নিকট আবেদনপত্র দাখিল করতে হবে। আবেদনের সাথে এজাহার ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চার্জশিটের সার্টিফাইড কপি দাখিল করতে হবে।
মামলা প্রত্যাহারের আবেদন পাওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দরখাস্তটি জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর (ক্ষেত্র বিশেষে মেট্রোপলিটন পাবলিক প্রসিকিউটর) এর কাছে মতামতের জন্য পাঠাবেন।
আবেদন পাওয়ার ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে পাবলিক প্রসিকিউটর (ক্ষেত্র বিশেষে মেট্রোপলিটন পাবলিক প্রসিকিউটর) তাঁর মতামত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর পাঠিয়ে দেবেন।
পাবলিক প্রসিকিউটর এর মতামত সংগ্রহ করে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবেদনটি সাত কার্যদিবসের মধ্যে জেলা কমিটির সভায় উপস্থাপন করবেন।
জেলা কমিটির নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, মামলাটি রাজনৈতিক বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে হয়রানির জন্য দায়ের করা হয়েছে, তাহলে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য কমিটি সরকারের কাছে সুপারিশ করবে।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুপারিশটি মামলার এজাহার, চার্জশিট-সহ আবেদন করার ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে নির্দিষ্ট “ছক” অনুযায়ী তথ্যাদিসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন।
অন্যদিকে, মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটির সভাপতি হচ্ছেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর উপদেষ্টা। এই কমিটির সদস্যরা হলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিব (আইন ও শৃঙ্খলা), যুগ্মসচিব (আইন) ও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি (যুগ্ম-সচিব পর্যায়ের নিচে নয়)।
মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটির সদস্য-সচিব হিসেবে আছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আইন-১ শাখার উপসচিব/সিনিয়র সহকারী সচিব/ সহকারী সচিব।
মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটির কার্যপরিধি ও কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে পরিপত্রটিতে বলা হয়, জেলা কমিটির কাছ থেকে সুপারিশ পাওয়ার পর মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি সুপারিশগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে এবং প্রত্যাহারযোগ্য মামলা চিহ্নিত করে তালিকা প্রস্তুত করবে ও মামলা প্রত্যাহারের কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর আওতাধীন মামলাগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলো The Criminal Law Amendment Act, 1958-এর ১০ (৪) ধারার বিধানমতে কমিশনের লিখিত আদেশ ব্যতীত প্রত্যাহার করা যায় না। এ কারণে এ ধরনের মামলা চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি করতে হবে। এ ধরণের মামলার বিষয়ে করণীয় পরবর্তীতে নির্ধারণ করা হবে।