ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি মাসের প্রথম দিন (১ মার্চ)। এরপর দুই সপ্তাহের বেশি কেটে গেলেও এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধবিরতি নিয়ে বনিবনা হয়নি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির এ পর্যায়ে হামাস স্থায়ীভাবে যুদ্ধের সমাপ্তি চাইলেও আলোচনা শুরু করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল। তাদের চাওয়া বন্দি বিনিময় ও সেনা প্রত্যাহারের মতো কোনোরকম শর্ত ছাড়া হামাসের হাতে জিম্মি সব ইসরায়েলির মুক্তি।
যুদ্ধবিরতির এমন থমকে থাকা পর্যায়ে হামাসের ওপর চাপ বাড়াতে প্রতিনিয়তই গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা, যাতে আবারও নতুন করে শুরু হয়েছে মৃত্যুর মিছিল।
সবশেষ শনিবার (১৫ মার্চ) ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে আরেক দফা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে ঝরে গেছে কমপক্ষে ১২ জনের প্রাণ। নিহতদের মধ্যে ৩ সাংবাদিক ও বেশ কয়েকজন সহায়তা কর্মী রয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। রবিবার (১৬ মার্চ) নিজেদের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজার উত্তর বেইত লাহিয়ায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় কমপক্ষে নয়জন নিহত হয়েছেন, যাদের তিনজন সাংবাদিক ও বেশিরভাগই মানবিক সহায়তা কর্মী।
এ হামলার ব্যাপারে ফিলিস্তিনি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় তিন সাংবাদিকসহ কমপক্ষে নয়জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। শনিবারের হামলাটি সাংবাদিক ও আলোকচিত্রীদের সঙ্গে থাকা একটি ত্রাণ দলকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে বলে জানা গেছে। নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে তিনজন স্থানীয় সাংবাদিক রয়েছেন।
এ ঘটনায় একটি বিবৃতি দিয়েছে দ্য প্যালেস্টানিয়ান জার্নালিস্ট প্রোটেকশান সেন্টার, যেখানে তারা জানিয়েছে, নিহত ওই সাংবাদিকরা ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য মানবিক ত্রাণ প্রচেষ্টার কর্মকাণ্ড নথিভুক্ত করছিলেন।
একইসঙ্গে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে চুক্তি অনুযায়ী যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময় বাস্তবায়নে এগিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিতে গাজা যুদ্ধবিরতি মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, একইদিন জুহোর আদ-ডিকের কেন্দ্রীয় শহরে আরও এক ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী, যেখানে দুইজন নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে বেইত লাহিয়ায় আরও এক ফিলিস্তিনি বালককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। একই হামলায় আরেক মহিলার পিঠে গুলি লেগেছে।
এছাড়া, রাফাহর উত্তর-পশ্চিমে আল-শাকুশ এলাকায় আল-কান পরিবারের একটি তাঁবুতে ইসরায়েলি কোয়াডকপ্টার থেকে ড্রোন বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। এ হামলায় আহত হয়েছেন আরও আটজন। একই শহরের পশ্চিমে তাল আস-সুলতান এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরেকজন ফিলিস্তিনি।
মূলত, প্রথম পর্যায়ের যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকা অবস্থায়ও বেশ কয়েকবার চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে গাজায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী এবং এসব ক্ষেত্রে বরাবরই খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে এসেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ফিলিস্তিনের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে, গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে গাজায় দেড় শতাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।