আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশায় দেশ। অন্তর্র্বতী সরকারের যাত্রা শুরুর পর থেকেই জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ (রূপরেখা) ঘোষণার দাবি করে আসছে বিএনপি। দিন যতই গড়াচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে অস্পষ্টতা ততই বাড়ছে। এবার ভোটের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ জানতে প্রথমবারের মতো সরাসরি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আজ বৈঠকে বসছে বিএনপি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বুধবার দুপুর ১২টায় বৈঠকটি হওয়ার কথা রয়েছে। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠকে বিএনপির মূল উদ্দেশ্য ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটানো। বৈঠকে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা কি, তা জানতে চাইবে বিএনপি। একই সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা দেবে বিএনপি।

বিএনপির মিডিয়া সেলের অন্যতম সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, আগামীকাল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক আছে। প্রধান উপদেষ্টার রাষ্ট্রীয় বাসভবন যমুনায় বেলা ১২টায় এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

সূত্র জানায়, বৈঠকের আগের দিন মঙ্গলবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বসে বিএনপির নীতি নির্ধারকরা। প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে তারা কে কী বিষয়ে কথা বলবেন তা ঠিক করেন। গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকে কারা কারা অংশ নেবেন তাও ঠিক করা হয়। ডিসেম্বরে ভোটের তারিখ ঘোষণা করতে প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করবে বিএনপি। দলটি মনে করে, চলতি বছরের ডিসেম্বরে ভোট না হলে সেটা কখনো পরের বছরের জুনে সম্ভব নয়। কারণ জুন-জুলাই বাদলা মৌসুম। তখন ভোটের সময় নয়। এই বলে আবার গড়িমসি করে ভোটের তারিখ চলে যাবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে। তখন পরিস্থিতি বিএনপির অনুকূলে নাও থাকতে পারে। রাজনীতিতে নতুন বাঁক আসতে পারে। দলটির নেতারা বলছেন, বৈঠকে আশ্বস্ত হলে ভোটের লড়াইয়ের কৌশল ঠিক করবে দলটি। আর ফলাফল অন্যরকম হলে রোডম্যাপ চেয়ে কর্মসূচিতেও যেতে পারে বিএনপি। তবে সময় নিয়ে তারা রাস্তায় বড় কর্মসূচিতে যেতে চান।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান সময়ের আলোকে বলেন, আমরা সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইব। সেখানে অবশ্যই নির্বাচনের দিনক্ষণ থাকবে। ডিসেম্বর না হয় জুনে মধ্যে নির্বাচন- প্রধান উপদেষ্টার এসব কথা জনমনে ধোঁয়াশা তৈরি করছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে কনসার্ন। তাই সরকারকে বিষয়টি পরিষ্কার করেত হবে। কেননা প্রত্যেক দলেরই কিছু পরিকল্পনা থাকে। রোডম্যাপ না পেলে কীভাবে আমরা নির্বাচনি পরিককল্পনা সাজাব? এ ছাড়াও আরও কিছু অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। বৈঠকে আশানুরূপ ফল না পেলে কী করবে বিএনপি? জবাবে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিএনপি তার কথা বলে যাবে। আমরা তো আর যুদ্ধ করতে যাব না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সময়ের আলোকে বলেন, বিএনপির জন্য এ বৈঠক নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা নির্বাচনের তারিখ জানতে চাইব। ডিসেম্বর না হয় জুনের মধ্যে নির্বাচন- এমন বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে চাইব। ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে প্রধান উপদেষ্টাকে সরাসরি বলব। এটি শুধু বিএনপির নয়, আপামর জনগণের দাবি। নির্বাচন ছাড়াও আরও কিছু বিষয় যেমন- বর্তমান রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আলোচ্যসূচি ঠিক করেছি। তিনি বলেন, আমাদের আবদার একটাই- সেটা হলো প্রধান উপদেষ্টা যাতে তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। তার কথামতো আগামী ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করে।

দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সময়ের আলোকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এ সাক্ষাতে আমরা জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সংস্কার প্রক্রিয়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করব। এটি খুবই সিরিয়াস বৈঠক হবে।

এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা তো সবসময় বলে আসছি যে, আলোচনার মধ্য দিয়ে, ঐক্যের মধ্য দিয়ে একটা নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই। নিঃসন্দেহে এটা সম্ভব হবে এবং আমরা সফল হব। নির্বাচন নিয়ে যে সংকট বা ধোঁয়াশা সৃষ্টি হচ্ছে তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে এ সমস্যারও সমাধান হবে।