মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে আবারও যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভে রাস্তায় নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ। স্থানীয় সময় শনিবার ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক ও শিকাগোসহ বিভিন্ন শহরে একযোগে এসব বিক্ষোভ করেন সে দেশের নাগরিকরা।

আয়োজকরা জানান, “ন্যাশনাল ডে অব অ্যাকশন” নামে এই কর্মসূচিতে প্রায় ৫০টি অঙ্গরাজ্যে একযোগে ৪০০টির মতো বিক্ষোভ কর্মসূচির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের বিতর্কিত অভিবাসন নীতি, সরকারি চাকরি ছাঁটাই, গাজা ও ইউক্রেন সংকট নিয়ে বর্তমান অবস্থান, এবং সামগ্রিকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদেই এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

হোয়াইট হাউসের সামনে লাফায়েট স্কয়ারে দেখা গেছে—বিক্ষোভকারীরা নানা স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান করছেন। কিছু প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল: “ওয়ার্কার্স শুড হ্যাভ দ্য পাওয়ার”, “নো কিনশিপ”, “স্টপ আর্মিং ইসরায়েল”, “ইমিগ্রেন্টস আর ওয়েলকাম হিয়ার” এবং “রেসিস্ট টাইরেনি থামাও”। অভিবাসী সম্প্রদায়ের পক্ষে এবং সরকারি দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে এসব বার্তা সাধারণ মানুষের আবেগ ও প্রতিবাদকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তহবিল কেটে দেওয়া এবং ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বিরুদ্ধেও জোরালো অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা।

ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হন। তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন, যেমন— ‘শ্রমিকদের শক্তি থাকা উচিত’, ‘রাজতন্ত্র চাই না’, ‘ইসরায়েলকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ করো’, ‘অভিবাসীদের স্বাগত’ এবং ‘অত্যাচার বন্ধ করো’।

অন্য শহরগুলোতেও একই রকম স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে। বিক্ষোভকারীরা অভিবাসনবিরোধী অবস্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশে দাঁড়িয়ে সংহতি প্রকাশ করেন।

অনেক বিক্ষোভকারী ফিলিস্তিনের পতাকা বহন করেন এবং গলায় ফিলিস্তিনি রুমাল (কেফিয়েহ) পরেন। তারা গাজায় নির্বিচারে হত্যা ও ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহের প্রতিবাদ জানান। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা চেয়ে স্লোগান দেন— ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’।

কিছু বিক্ষোভকারী ইউক্রেনের পতাকাও বহন করেন। তারা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অনেকেই ট্রাম্পের নেওয়া অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ। যেমন, ট্রাম্প সম্প্রতি সরকারি দক্ষতা বিভাগ (উঙএঊ) গঠন করে ইলন মাস্ককে এর দায়িত্ব দিয়েছেন। এর আওতায় ২৩ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে প্রায় দুই লাখের বেশি পদ শূন্য করে দেওয়া হয়েছে। অভিবাসনবিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে অনেক বিদেশি শিক্ষার্থীকেও গ্রেফতার ও বিতাড়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। এর ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী, অভিবাসী এবং মানবাধিকার কর্মীরা একত্রিত হয়ে উঠেছেন।

বিক্ষোভের আয়োজক গোষ্ঠী ‘৫০৫০১’ এর দাবি, তাদের আন্দোলনের লক্ষ্য শুধুই ট্রাম্পবিরোধী নয়—এটি একটি বৃহৎ সামাজিক জাগরণ, যা যুক্তরাষ্ট্রের বৈষম্য, নিপীড়ন ও যুদ্ধনীতি প্রত্যাখ্যান করে। তারা আগামী ১ মে “মে ডে স্ট্রং” নামে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। এই আন্দোলন কেবল ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে নয়, বরং তা এক গণজাগরণের প্রতিচ্ছবি—যেখানে শ্রমিক, শিক্ষার্থী, অভিবাসী ও মানবাধিকারকর্মীরা এক কণ্ঠে বলছেন: “সমান অধিকারই প্রকৃত শক্তি, নিপীড়ন নয়।” তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স