আওয়ামী সরকারের সময়কার প্রতাপশালী সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র‌্যাব প্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারি করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)। গত ১০ এপ্রিল এই রেড নোটিশ জারি করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র ইনামুল হক সমকালকে বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, আদালতের নির্দেশনায় প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) অথবা তদন্ত সংস্থার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) শাখা ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির আবেদন করে থাকে।

বেনজীরের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানা গেছে, তিনি স্বপরিবারে পলাতক। কোন দেশে আছেন তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি বাংলাদেশ পুলিশ। তবে আশার কথা হচ্ছে রেড নোটিশ জারি হওয়ায় খুব শিগগিরই তার অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যাবে। তাকে গ্রেফতার করে দেশে ফিরিয়ে আনাও সম্ভব হবে।

বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিশটি এখনো ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। তার অবস্থান শনাক্ত করার পর সেটি ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। তবে রেড নোটিশ জারির বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশকে ই-মেইলের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে ইন্টারপোলের পক্ষ থেকে। এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আরও ১১ জনের বিরুদ্ধে তিন দফায় ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। চিঠিপত্র আদান-প্রদান ছাড়াও একটি ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও রেড নোটিশ জারির বিষয়টি পর্যালোচনা করছে ইন্টারপোল।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পদত্যাগ ও দেশ থেকে পালানো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারির জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে পৃথক তিন ধাপে আবেদন করেছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)।

যাদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন পর্যালোচনা করছে ইন্টারপোল

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ।

এখানে উল্লেখ্য যে, ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুদক। অনুসন্ধান চলাকালে গত বছরের ৪ মে সপরিবারে দেশ ছাড়েন তিনি। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপির দায়িত্ব পালন করা বেনজীর ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত র‌্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন, দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগের তদন্ত চলছে।