রাজনৈতিক উদ্দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার অপব্যবহার ঠেকাতে নতুন বিধান প্রণয়নে সম্মত হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। রোববার (১৩ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপের দ্বাদশ দিনে এই ঐকমত্যে পৌঁছায় দলগুলো।

জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিষয়ে সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১৪১(ক) এর ১ নম্বর ধারায় বর্তমানে উল্লেখ রয়েছে- যদি রাষ্ট্রপতির কাছে সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয়, যুদ্ধ, বহিরাক্রমণ কিংবা অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের কারণে বাংলাদেশ বা তার কোনো অংশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবন হুমকির মুখে পড়েছে, তবে তিনি অনধিক ৯০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন। তবে এই ঘোষণা দেওয়ার আগে মন্ত্রিসভার লিখিত অনুমোদন বাধ্যতামূলক হবে। বর্তমান সংবিধানে এই সময়সীমা ১২০ দিন।

প্রস্তাবনায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, জরুরি অবস্থা ঘোষণার বৈধতার শর্ত হিসেবে পূর্বে যে ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর’ প্রয়োজনীয় ছিল, তা পরিবর্তন করে ‘মন্ত্রিসভার সম্মতি’ গ্রহণের বিধান যুক্ত করা হবে।

এই বিষয়ে ৭ ও ১০ জুলাই অনুষ্ঠিত আলোচনার ভিত্তিতে রোববারের সংলাপে সিদ্ধান্ত হয়, ১৪১(ক) অনুচ্ছেদে ব্যবহৃত ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগ’ শব্দটি বাদ দিয়ে তার পরিবর্তে ‘রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা, মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত হুমকি’- এই শব্দগুলো অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

জরুরি অবস্থার সময় নাগরিকের দুটি মৌলিক অধিকারকে অলঙ্ঘনীয় হিসেবে বিবেচনায় আনার বিষয়ে সংলাপে গুরুত্বারোপ করা হয়। সংবিধানের ৪৭(৩) ধারা অনুযায়ী, জরুরি অবস্থার সময়েও কোনো নাগরিকের জীবনধিকার এবং নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক ও মর্যাদাহানিকর আচরণ বা শাস্তি থেকে মুক্ত থাকার অধিকার খর্ব করা যাবে না।

জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এই বিষয়ে মন্ত্রিসভার বদলে সর্বদলীয় বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তাব দেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের আহমদ আবদুল কাদের প্রস্তাব করেন, মন্ত্রিসভার সঙ্গে বিরোধী দলকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।