জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সতর্ক করে বলেছে, গাজার প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ অভুক্ত অবস্থায় দিন পার করছে। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, অপুষ্টি বেড়েই চলেছে। ডব্লিউিএফপি জানিয়েছে, উপত্যকাটিতে ভয়াবহভাবে বাড়ছে অপুষ্টিজনিত সমস্যা এবং প্রায় ৯০ হাজার নারী-শিশুর প্রয়োজন জরুরি চিকিৎসা। খবর বিবিসির।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত গাজায় ৫৯ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। চলতি বছরের মার্চের শুরুতে ইসরায়েল পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে এবং দুই সপ্তাহ পর আবারও হামলা শুরু করে। ফলে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ে। বর্তমানে গাজায় খাবার, ওষুধ ও জ্বালানির ঘাটতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গাজাবাসীদের অধিকাংশই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং ৯০ শতাংশের বেশি ঘরবাড়ি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডান নতুন করে বিমান থেকে ত্রাণ ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে জর্ডানের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলের কাছ থেকে এখনো তাঁদের সেনাবাহিনী এ–সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় অনুমতি পায়নি।

গাজায় ত্রাণসহায়তা প্রবেশের ওপর থেকে অবিলম্বে বিধিনিষেধ তুলে নিতে গতকাল ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। এ তিন দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে অবিলম্বে গাজায় চলমান ‘মানবিক বিপর্যয় ও যুদ্ধ’ বন্ধের আহ্বানও জানায়। দেশগুলো বলেছে, ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলা উচিত।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদাসীনতা ও নিষ্ক্রিয়তা ব্যাখ্যা করার মতো না। কোনো করুণা নেই, সত্য নেই, নেই কোনো মানবতা।’

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে গুতেরেস বলেন, ২৭ মে থেকে এ পর্যন্ত খাদ্য সংগ্রহের চেষ্টা করতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ওই সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন জাতিসংঘের বিকল্প হিসেবে গাজায় ত্রাণ বিতরণ শুরু করে।

এদিকে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে ইসরায়েল–হামাস নতুন চুক্তির সম্ভাবনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কাতার থেকে তাদের আলোচনার জন্য পাঠানো দল প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, হামাস ‘আসলে কোনো চুক্তি করতে চায় না।’ তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, তারা মরতে চায়।’

তবে হামাস যুক্তরাষ্ট্রের এমন মন্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসির গাজা প্রতিনিধি‍কে বলেন, মধ্যস্থতাকারীরা তাদের জানিয়েছেন, আলোচনা এখনো ভেস্তে যায়নি। আগামী সপ্তাহে ইসরায়েলি প্রতিনিধিদলের দোহায় ফেরার কথা রয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হওয়ার পর ইসরায়েল গাজায় তাণ্ডব শুরু করেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ওই সময় থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ৫৯ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।