আগামী নির্বাচনে দেশের অধিকাংশ মানুষের সমর্থন বিএনপি ও ধানের শীষ পাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রোববার (১০ আগস্ট) রাজশাহী মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আধা ঘণ্টার বক্তব্যে তারেক রহমান রাষ্ট্র পুনর্গঠন এবং দলীয় ঐক্যের ওপর জোর দেন।

তিনি বলেছেন, মানুষ এখন বিশ্বাস করে, একমাত্র বিএনপির পক্ষেই সম্ভব ধীরে ধীরে এই দেশকে গড়ে তোলা। আজ দেশের অধিকাংশ মানুষ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জগুলো যদি মোকাবিলা করতে হয়, তাহলে আমাদের প্রথমে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না থাকি, তাহলে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারব না। জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আগামী নির্বাচনে দেশের অধিকাংশ জনগণের সমর্থন বিএনপি এবং ধানের শীষ পাবে। এর পর দেশ গড়তে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আছে। আগামী নির্বাচনে আমরা সরকার গঠনে সক্ষম হলে, আমাদের দেশকে গড়তে হবে। স্বৈরাচার সরকার তাদের নিজেদের স্বার্থে শিক্ষা, বিচার, আইনশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। আগামী নির্বাচনে আমরা জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করলে, আমাদের এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে।

তিনি বলেন, দেশ গড়তে আমরাই প্রথম সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেছি। আড়াই বছর আগে স্বৈরাচার সরকারের আমলেই আমরা দেশের মানুষের সামনে ৩১ দফা উপস্থাপন করেছিলাম। সেই ৩১ দফার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি দিয়েছিলাম। অন্তর্র্বতী সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এখন সংস্কারের জন্য যেসব আলোচনায় আসছে, অধিকাংশ সংস্কার প্রস্তাব বিএনপি আড়াই বছর আগেই জাতির সামনে ঘোষণা করেছিল। আমরা বিশ্বাস করি, এই দেশকে এগিয়ে নিতে হলে কতগুলো ব্যাপারে রাষ্ট্রের সংস্কার করতে হবে।

পদ্মায় সারা বছর পানি থাকে না–উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। ফারাক্কার কারণে পদ্মা নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। সুজলা-সুফলা এলাকা পদ্মা নদীর পানির অভাবে মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। পানির ন্যায্য হিস্যা পেতে আমরা প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যাব, জাতিসংঘে যাব। আমাদের পানির ব্যবস্থা করতে হবে। খালগুলো সংস্কার করতে হবে।

তিনি বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকার দেশের স্বাস্থ্য খাতকে ধ্বংস করে এমনভাবে সাজিয়েছিল, যাতে পার্শ্ববর্তী একটি দেশে গিয়ে মানুষ সেবা নিতে বাধ্য হয়। এই দেশে হাসপাতাল ধ্বংস করে ইচ্ছা করে রোগীদের পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠিয়ে দিত। তারা চিকিৎসার নামে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে দিত। আমাদের এখন নিজস্ব চিকিৎসক ও নার্স গড়ে তুলতে হবে, যাতে দেশের মানুষ এই দেশের হাসপাতালেই উন্নত চিকিৎসাসেবা পায়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অন্তর্র্বতী সরকার ঘোষণা করেছে– আগামী রমজানের আগে দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শুধু ভোট হলেই হবে না, ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করলেই হবে না। জনগণ বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে জানতে চায়– দেশের ভবিষ্যৎ কী? বিএনপি আগামীতে কী করবে? কারণ, দেশের জনগণ বিএনপির ওপর আস্থা রাখতে চায়।

দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার শপথ করিয়ে তারেক রহমান বলেন, আমরা দেশের মানুষের সামনে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। পরবর্তী পদক্ষেপ আমাদের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা।

এর আগে দুপুর সোয়া ২টায় সম্মেলন উদ্বোধন করেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম। এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন দলটির আরেক উপদেষ্টা রাজশাহীর সাবেক মেয়র ও সাবেক এমপি মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত খালেক, বিএনপির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক ও রাজশাহীর সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সহসম্পাদক শফিকুল হক মিলন। সভাপতিত্ব করেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা। সম্মেলন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সদস্য সচিব মামুন-অর-রশিদ মামুন।