একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধানের দায়িত্বে থাকতে পারবেন না বলে সুপারিশ করা হয়েছে জুলাই সনদের খসড়ায়। খসড়াটি এরই মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছে। মূলত রাষ্ট্র সংস্কার, সংবিধান, নির্বাচনসহ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় যে সব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে খসড়ায়।

জুলাই সনদের খসড়ায় বলা হয়েছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জোট ও শক্তিসমূহ পারস্পরিক ও সম্মিলিত আলোচনার মাধ্যমে এসব বিষয়ে একমত হওয়া গেছে।

তবে সব দল সব বিষয়ে একমত হয়নি, কোনো কোনো দল কোনো কোনো সুপারিশের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে।

সনদের পটভূমিতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বর্ণিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামজিক সুবিচারের নীতিকে ধারণ করে যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠনের আকাঙ্ক্ষা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে তৈরি হয়েছিল, দীর্ঘ ৫৩ বছরেও তা অর্জন করা যায়নি।

‘রাষ্ট্রকাঠামোতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের’ মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অকার্যকরী ও বিচারহীনতার সহায়ক হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতির বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি আইনসভার উভয় কক্ষের (নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ) সদস্যদের গোপন ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হবেন। রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হওয়ার সময় কোনো ব্যক্তি কোনো রাষ্ট্রীয়, সরকারি বা রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের পদে থাকতে পারবেন না।

এছাড়া রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতে এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়াতে সংবিধানে সংশোধনীর প্রস্তাব করা হবে। কারো পরামর্শ বা সুপারিশ ছাড়াই নিজ এখতিয়ার বলে রাষ্ট্রপতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ, তথ্য কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগ করতে পারবেন।

রাষ্ট্রপতির অভিশংসন প্রক্রিয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রদ্রোহ, গুরুতর অসদাচরণ বা সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করা যাবে। আইনসভার নিম্নকক্ষে অভিশংসন প্রস্তাবটি দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে পাস করার পর তা উচ্চকক্ষে পাঠাতে হবে এবং শুনানির মাধ্যমে দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনে অভিশংসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতার বিধান থাকলেও এ ক্ষেত্রে আইনের দ্বারা নির্ধারিত মানদণ্ড, নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে খসড়ায়। সংশ্লিষ্ট আইনে বিধান রাখা হবে যে, কোনো আবেদন বিবেচনার আগে মামলার বাদী বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পরিবারের সম্মতি নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর পদের মেয়াদ

জুলাই সনদের খসড়ায় বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর দায়িত্বে থাকতে পারবেন। এ জন্য সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা ব্যক্তি একইসঙ্গে দলীয় প্রধানের পদে থাকতে পারবেন না, এমন বিধান সংবিধানে যুক্ত করা হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা

খসড়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিষয়ে বলা হয়েছে, মেয়াদ শেষ বা অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংসদের মেয়াদ অবসান হওয়ার ১৫ দিন আগে মেয়াদ অবসান ছাড়া অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙ্গে গেলে, ভঙ্গের পরবর্তী ‘১৫’ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে।

সংসদের মেয়াদ অবসানের ক্ষেত্রে এর ৩০ দিন আগে জাতীয় সংসদের স্পিকারের তত্ত্বাবধানে এবং সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধীদলের) এবং সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধিসহ (যদি সংসদে আসন সংখ্যার বিবেচনায় একাধিক দল দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধীদলের অবস্থানে থাকে তাহলে সেসব দলের মধ্য থেকে নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া দল দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধীদল হিসেবে বিবেচিত হবে) মোট ৫ সদস্য সমন্বয়ে একটি ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি’ গঠিত হবে।

কমিটির যেকোনো বৈঠক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সভাপতিত্ব করবেন স্পিকার। কমিটি গঠনের পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহ, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলসমূহ এবং জাতীয় সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের কাছ থেকে সংবিধানের ৫৮গ অনুচ্ছেদে বর্ণিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির নাম প্রস্তাবের আহ্বান করবেন এবং এক্ষেত্রে প্রতিটি দল একজন এবং একজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য একজন ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করতে পারবে।

রাজনৈতিক দলসমূহ এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যগণ পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংসদ সচিবালয়ে তাদের প্রস্তাবিত নাম দাখিল করবেন।

 

পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কমিটির সদস্যগণ সভায় মিলিত হয়ে নিজেদের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত এবং রাজনৈতিক দলসমূহ ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে প্রস্তাবিত নামসমূহ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করত বাংলাদেশের যে সকল নাগরিক সংবিধানের ৫৮গ অনুচ্ছেদ এর অধীনে উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্য তাদের মধ্য হতে একজনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নিবেন এবং তিনি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। বাছাই কমিটি গঠিত হওয়ার পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার মধ্যে এ পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কোনো ব্যক্তিকে চূড়ান্ত করা সম্ভব না হলে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা পদের জন্য ৫৮গ অনুচ্ছেদে বর্ণিত শর্ত অনুসরণপূর্বক সংসদের সরকারি দল বা জোট ৫ জন উপযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে এবং প্রধান বিরোধী দল বা জোট পাঁচ জন উপযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে।

এছাড়া সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল দুই জন উপযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে।উপর্যুক্ত প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত নামসমূহ স্পিকার জনসাধারণের অবগতির জন্য প্রকাশ করবেন।

উপর্যুক্ত চ-এ বর্ণিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারি দল বা জোটের প্রস্তাবিত পাঁচ জন ব্যক্তির তালিকা থেকে প্রধান বিরোধী দল বা জোট যেকোনো একজনকে বেছে নেবে;

একইভাবে প্রধান বিরোধী দল প্রস্তাবিত পাঁচ ব্যক্তির নামের তালিকা থেকে সরকারি দল যেকোনো এক জনকে বেছে নেবে। দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের প্রস্তাবিত মোট দুই জনের নামের তালিকা থেকে সরকারি দল বা জোট যেকোনো একজনকে বেছে নেবে এবং প্রধান বিরোধী দল বা জোট যেকোনো এক জনকে বেছে নেবে।

এই পদ্ধতিতে প্রাপ্ত নামসমূহের মধ্য হতে যেকোনো একজনের ব্যাপারে যদি প্রস্তাবকারী দলগুলোর মধ্য ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে তিনিই পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে মনোনীত হবেন।

অথবা কোনো একজনের ব্যাপারে কমিটির পাঁচ জন সদস্যের মধ্যে যদি চার জন সদস্য একমত হন তাহলে তিনিই পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত হবেন।

যদি এই পদ্ধতিতে কোনো একজনের বিষয়ে প্রস্তাবকারী পক্ষসমূহ একমত হতে না পারে তাহলে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচার বিভাগের দুইজন প্রতিনিধি বাছাই কমিটিতে সদস্য হিসেবে যুক্ত হবেন এবং তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কারও নাম প্রস্তাব করতে পারবেন না।

এই দুইজন প্রতিনিধির মধ্যে একজন আপিল বিভাগের বিচারপতি হবেন এবং একজন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হবেন। বিচার বিভাগীয় প্রতিনিধিকে মনোনীত করার জন্য সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি, কর্মরত প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি সমন্বয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠিত হবে।

এই পর্যায়ে সাত সদস্য বিশিষ্ট বাছাই কমিটির সদস্যরা পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্পিকারের তত্ত্বাবধানে গোপন ব্যালটে ‘র‍্যাংকড চয়েজ’ বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতি প্রয়োগ করে সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে যেকোনো একজনকে পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নেবেন।

উপর্যুক্ত যেকোনো পদ্ধতিতে মনোনীত ব্যক্তিকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতি পরবর্তী ৯০ দিনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগদান করবেন। তবে শর্ত থাকে যে, সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় তিনি শপথ গ্রহণ করবেন না।

উপর্যুক্ত পদ্ধতিসমূহের মাধ্যমেও যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বেছে নেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুসরণ করতে হবে; তবে শর্ত থাকে যে, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে বেছে নেওয়া যাবে না।

কোনো কারণে প্রধান উপদেষ্টার পদ শূন্য হলে রাষ্ট্রপতি কোনো সময় ব্যতিরেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য পূর্ববর্তী র‍্যাংকড চয়েজ বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতিতে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বয়সে জ্যেষ্ঠতম ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগদান করবেন।

দ্বিতীয় স্থানে থাকা বয়সে জ্যেষ্ঠতম ব্যক্তি দায়িত্ব গ্রহণে অসম্মতি জানালে অথবা দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে র‍্যাংকড চয়েজ বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতিতে পরবর্তী স্থানে থাকা ব্যক্তি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য নিযুক্ত হবেন।

এই পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা পদে পরিবর্তন হলেও পূর্বতন উপদেষ্টা পরিষদ বহাল থাকবে। তবে উপদেষ্টা পরিষদের কোনো পদ শূন্য হলে নবনিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টা সেই শূন্যপদ পূরণের অধিকার রাখবেন।

নিয়োগলাভের পর প্রধান উপদেষ্টা উপর্যুক্ত বাছাই কমিটির সঙ্গে পরামর্শক্রমে সংবিধানের ৫৮গ অনুচ্ছেদে বর্ণিত উপযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্য হতে অনধিক ১৫ (পনেরো) জন ব্যক্তিকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের জন্য বেছে নেবেন এবং রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ প্রদান করবেন।

মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙ্গে গেলে, ভঙ্গ হওয়ার পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় বিলুপ্ত সংসদের একই ধরনের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি’ গঠিত হবে এবং উক্ত কমিটি পরবর্তী ১৪ দিন তথা ৩৩৬ ঘণ্টার মধ্যে উক্তরূপ অভিন্ন পদ্ধতিতে এক জন ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নিবে এবং তিনি অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হবেন।

সংবিধানের ৫৮(৭)(ঘ) সংশোধন করে “বাহাত্তর বৎসরের অধিক বয়স্ক নহেন” এর পরিবর্তে “পঁচাত্তর বৎসরের অধিক বয়স্ক নহেন” শব্দসমূহ প্রতিস্থাপিত হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন এবং উপদেষ্টারা মন্ত্রীর পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন।

সংবিধানে বর্ণিত বিধানাবলি সাপেক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব, কর্তব্য ও এখতিয়ার ও অবসানের সময়সীমা নির্ধারিত হবে।

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ হবে অন্তত ৯০ দিন। তবে দৈব-দুর্বিপাকজনিত কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আরও সর্বোচ্চ ৩০ দিন দায়িত্ব পালন করতে পারবে।

নতুন সংসদ গঠিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী যে তারিখে তার পদের কার্যভার গ্রহণ করবেন সেই তারিখে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হবে।

 

দুই কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা

জুলাই সনদের খসড়ায় দুই কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ হবে নিম্নকক্ষ যার প্রতিনিধিরা সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন। আর উচ্চ কক্ষের নাম হবে সিনেট।

খসড়ায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে একটি দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা থাকবে, যার নিম্নকক্ষ (জাতীয় সংসদ) এবং উচ্চকক্ষ (সিনেট) ১০০ সদস্য নিয়ে নিয়ে গঠিত হইবে। নিম্নকক্ষের নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের ১০০ জন সদস্য নির্বাচিত হবেন। উচ্চকক্ষের মেয়াদ হবে শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর। তবে কোনো কারণে নিম্নকক্ষ ভেঙ্গে গেলে উচ্চকক্ষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্ত হইবে।

রাজনৈতিক দলগুলো নিম্নকক্ষের সাধারণ নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের সময় একই সঙ্গে উচ্চকক্ষের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করিবে। তালিকায় কমপক্ষে ১০ শতাংশ নারী প্রার্থী থাকতে হবে।

আইনসভার উচ্চকক্ষ, নিম্নকক্ষের প্রস্তাবিত আইন প্রণয়নের পর্যালোচনা করবে, তাদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা থাকবে না। সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত যেকোনো বিল উচ্চকক্ষের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস করতে হবে। উচ্চকক্ষের সদস্যদের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা নিম্নকক্ষের সদস্যদের যোগ্যতার মতোই হবে।

জাতীয় সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব ক্রমান্বয়ে ১০০ আসনে উন্নীত করা হবে। বিদ্যমান সংরক্ষিত ৫০টি আসন বহাল রেখে সংবিধানের ৬৫ (৩) অনুচ্ছেদে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে।

জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ স্বাক্ষরের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে বিদ্যমান ৩০০ সংসদীয় আসনের জন্য প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে ন্যূনতম পাঁচ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার জন্য দলগুলোকে আহ্বান জানানো হবে। প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক সাধারণ নির্বাচনে ন্যূনতম পাঁচ শতাংশ বর্ধিত হারে নারী প্রার্থী মনোনয়ন অব্যাহত রাখবে।