বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘দ্রুত দেশে ফিরবেন’ বলে জানিয়েছেন দলটির নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
দীর্ঘ প্রায় ১৯ বছর পর রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টা ২২ মিনিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যান সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত হন।
তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন, বৈঠকে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না—জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ্, দ্রুত ফিরে আসবেন৷ আপনারা সবাই দোয়া করবেন৷’
লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, ‘আমি মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে শুকরিয়া আদায় করছি৷ সাড়ে ১৭ বছর পর নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে জেল থেকে মুক্ত হয়েছি। আমাদের জাতীয়তাবাদী দল থেকে একটি টিম করা হয়েছে৷ সেই টিমের মধ্যে আমিও একজন৷ আমার সঙ্গে সিনিয়র সেক্রেটারি কামরুজ্জামান সাহেব রয়েছেন৷ মাহবুব সাহেব আছেন৷ আরও একজনের থাকার কথা ছিল, কিন্তু তিনি আসতে পারেননি৷
তিনি বলেন, আমাদের আসার উদ্দেশ্য কিছু কিছু জিনিস আমাদের উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ সে বিষয়গুলো আমরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি৷ আমাদের আসার উদ্দেশ্য বর্তমানে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও সরকারকে সহযোগিতা করা৷ সেই সহায়তার অংশ হিসেবে আমরা আমাদের কনসার্ন জানিয়েছি৷ তারাও একমত হয়েছেন৷ আলোচনা মোটামুটি ফলপ্রসূ হয়েছে৷ দ্যাটস ইট৷
আপনি উদ্বেগের কথা বলেছেন, সেটি কী—এমন প্রশ্নে লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে পতিত সরকার একটি বিশেষ শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠক করেছে। সেটা আপনারা পত্রিকায় দেখেছেন৷ এস আলম গ্রুপের সঙ্গে৷ তাদের সেই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের নির্বাচন বানচাল করা৷ নির্বাচনে বিভিন্ন সহিংস ঘটনা ঘটানো৷ এটি একটি উদ্বেগের জায়গা৷ সে ব্যাপারে আমরা আলোচনা করেছি৷
‘আরও অনেক বিষয়ে আলোচনা করেছি৷ যেমন- বিভিন্ন অবৈধ অস্ত্র ও লুট হওয়া অস্ত্র এখনো যে উদ্ধার হয়নি সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে’— বলেন তিনি।
আপনাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো নিয়ে সরকারকে কোনো সুপারিশ করেছেন কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা ব্যাপারে আমরা কনসার্ন জানিয়েছি৷ অতি সম্প্রতি এএসআই নিয়োগ হচ্ছে৷ সাধারণত নিয়োগ হয় কনস্টেবল, এসআই ও এএসপি পদে৷ কিন্তু এবার এএসআই নিয়োগ হচ্ছে৷ যারা কনস্টেবল হিসেবে যোগদান করে তাদের একটা আশা থাকে ভবিষ্যতে এএসআই হবে৷ তারা ইন্সপেক্টর পর্যন্ত হতে পারে৷ আবার এসআই হিসেবে যারা যোগদান করে তারা ডিআইজি পর্যন্ত হতে পারে৷ এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন মনে করছেন—এমন প্রশ্নে বলেন, ‘আমি এটুকু বলবো, তারা ভালো করার যথেষ্ট চেষ্টা করছেন৷’
২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সময়ে বেগম খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন বাবর। তিনি সেই সময়ে নেত্রকোণা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
তবে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনায় পরবর্তীতে তার নাম আসামির তালিকায় উঠে আসে। ২০১২ সালের ১৮ মার্চ তারেক রহমানসহ বাবরের নাম ওই মামলায় যুক্ত হয়।
এরপর ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে বাবরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। প্রায় সাড়ে ১৭ বছর কারাবাসের পর ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট তাকে মামলাটি থেকে খালাস দেন। পরবর্তীতে সব মামলায় খালাস পাওয়ার পর ২০২৫ সালের ১৬ জানুয়ারি তিনি কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান।
দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর বাবরের এ মন্ত্রণালয় সফরকে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক অঙ্গনে বিশেষ নজরে দেখা হচ্ছে।