ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করিেত একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার অনুমতি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি নেতাদের জন্য একটি বুলেটপ্রুফ বাসের অনুমতি পেয়েছে।

বিএনপির নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বলেন, নির্বাচনের সময় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সারাদেশে প্রচারে যাবেন, মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করবেন। এই সময়ে তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি গাড়ি কেনার বিষয়ে চিঠি দেয়ার পর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, “বিএনপির পক্ষ থেকে প্রায় পাঁচ মাস আগে তারেক রহমানের জন্য বুলেটপ্রুফ গাড়ির নথি পাঠানো হয়েছিল। স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রতিবেদন অনুযায়ী তখন অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। নতুন করে খালেদা জিয়ার গাড়ির জন্যও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।”

বিএনপি এ ছাড়াও একটি শটগান ও দুটি পিস্তলের লাইসেন্সের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। লাইসেন্স অনুমোদন এখনো বিবেচনাধীন।

বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সূত্রে জানা গেছে, জাপান, কানাডা ও জার্মানি সাধারণত বুলেটপ্রুফ গাড়ি তৈরি করে। শেখ হাসিনার জন্য নব্বইয়ের দশকে এবং ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর বুলেটপ্রুফ গাড়ি আনা হয়েছিল জাপান থেকে।

বারভিডার সভাপতি আবদুল হক বলেন, বেসরকারিভাবে কেউ বুলেটপ্রুফ গাড়ি আনতে পারেন না, এটি সরকারিভাবে অনুমোদিত হতে হয়। একটি গাড়ির দাম প্রায় ২ লাখ ডলার, আর ৮০০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে আনলে মোট খরচ দাঁড়ায় প্রায় ২২ কোটি টাকা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত গত জুনে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যবহারের জন্য বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার আবেদন করেন। পরে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের ব্যবহারের জন্য একটি বুলেটপ্রুফ বাস কেনার অনুমতিও চাওয়া হয়।

এ ছাড়া বিএনপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের আবেদন করেছে। দলটি একটি শটগান ও দুটি পিস্তলের লাইসেন্সের অনুমতি চেয়েছে, যা এখনো বিবেচনাধীন।

পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নির্বাচনী প্রচারে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান হামলার ঝুঁকিতে থাকতে পারেন। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের আক্রমণ বা সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা বিবেচনায় বুলেটপ্রুফ গাড়ির অনাপত্তি দেওয়া হয়েছে।

২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তিনি দ্রুত দেশে ফিরবেন এবং নির্বাচনে অংশ নেবেন। ২০১৫ সালে তাবিথ আউয়ালের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার সময় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনাও উল্লেখ করেন বিএনপি নেতারা, যা তাদের নিরাপত্তা উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ কার্যক্রমের পটভূমিতে বিএনপি নেতৃত্বের ওপর হামলার আশঙ্কা থেকেই এই নিরাপত্তা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।