কিশোরগঞ্জসহ দেশের ৮ জেলার হাওর অঞ্চলে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত একটি প্রকল্প স্থগিত করা হয়েছে। জলবায়ু সহনশীল জীবনমান উন্নয়ন শীর্ষক এ প্রকল্পটি প্রস্তাব দিয়েছিল স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ প্রকল্প স্থগিত করা হয়।
এ সভায় এক হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার ১৩ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পায়নি প্রস্তাবিত ‘জলবায়ু সহনশীল জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প’ (সিআরএলইপি); এ প্রস্তাব হাওর ও খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে জলবায়ু সহনশীল জীবনমান গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল।
প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ২৬৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৩০৫ কোটি, ইফাদের ঋণ ৮৫১ কোটি, ডানিডার অনুদান ১০৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপন করা হলে বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বাধা দেন।
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু সহনশীলতার নামে এই প্রকল্পে মূল গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ইট-পাথর ও অবকাঠামো নির্মাণে, কিন্তু টেকসই জীবিকা উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসের বিষয়টি প্রায় উপেক্ষিত।’
তার এই আপত্তির পর সভায় সিদ্ধান্ত হয়—হাওর অঞ্চলের প্রকৃত চাহিদা অনুযায়ী অবকাঠামো নির্মাণের অংশ কমিয়ে প্রকল্পটি পুনর্গঠন করে পুনরায় একনেকে উপস্থাপন করতে হবে।
পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের আওতায় ৩৩৪ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, ৫৮টি বাজার পুনর্বাসন, ৩৪টি ঘাট নির্মাণ, ৭২টি আশ্রয়কেন্দ্র, ৪৮০টি শৌচাগার ও ৭২০টি নলকূপ স্থাপন করার পরিকল্পনা ছিল।
এছাড়া ৪০ হাজার যুবককে প্রশিক্ষণ ও ২০ হাজার যুবককে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তবে পরিকল্পনা কমিশনের মূল্যায়নে দেখা যায়, প্রকল্পের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অর্থ ব্যয় হবে সড়ক, ঘাট, বাজার ও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে। অর্থাৎ, প্রকল্পের নামের সঙ্গে বাস্তব কার্যক্রমের সাযুজ্য নেই। কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ আগে থেকেই জীবিকা ও প্রশিক্ষণ উপাদান বাড়ানোর পরামর্শ দিলেও তা চূড়ান্ত প্রস্তাবে প্রতিফলিত হয়নি। ফলে পরিবেশ উপদেষ্টার মতামতের ভিত্তিতে একনেক সভায় প্রকল্পটি ফেরত পাঠানো হয়।
প্রধান উপদেষ্টা ও একনেকের চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১ হাজার ৮৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ৫৩ কোটি ২ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৫০ কোটি টাকা।
সভায় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।











