বন্যপ্রাণী হত্যা রোধে তৈরি হতে যাওয়া নতুন আইনে জামিনের ব্যবস্থা আর থাকছে না বলে জানিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। রোববার (২৬ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক মিঠাপানির ডলফিন দিবস উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বন অধিদপ্তরের এক আলোচনা সভায় তিনি এই তথ্য জানান।

তিনি বলেছেন, বন্য প্রাণী হত্যা মামলায় জামিনের সুযোগ থাকছে না নতুন আইনে। মেছো বিড়ালকে শুধু শুধুই মেছো বাঘ বলি, অযথাই ইনোসেন্ট এ প্রাণীকে মেরে ফেলি। এমনকি ভিডিও রেকর্ড করে নেটে ছেড়ে দিই।

আমাদের আচরণগত পরিবর্তন আনতে হবে। একটির অস্তিত্বের সঙ্গে অন্যটির অস্তিত্ব সম্পর্কযুক্ত। মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন না এলে প্রাণীগুলোকে বাঁচানো সম্ভব নয়। তার মতে, যদি মানুষ নিরীহ প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর হয়, তা সমাজের মূল্যবোধের অবক্ষয়ের প্রতিফলন এবং এই নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে সমাজকে দাঁড়াতে হবে।

উপদেষ্টা বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের আইনের অগ্রগতি হয়েছে, তবে এর পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। তিনি আরও জানান, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে দেশের ৬৪টি জেলায় ভলান্টিয়ার বা স্বেচ্ছাসেবী দল গড়ে তোলা হবে।

নদীর সুস্থতা প্রসঙ্গে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ডলফিন আমাদের নদীর সুস্থতার প্রতীক। যেখানে ডলফিন টিকে থাকে, সেখানে নদীও টিকে থাকে—আর নদী টিকে থাকলেই মানুষ বাঁচে। ডলফিন নিয়ে কথা বলা মানে আমাদের বেঁচে থাকার কথাই বলা।’ তিনি উল্লেখ করেন, নদীর পানি দূষিত হলে তা যেমন ডলফিনের জন্য বিপদ, তেমনি মানুষের জন্যও; তাই নদী পরিষ্কার রাখাই মানুষের ও ডলফিনের জীবনের অন্যতম শর্ত।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা নিজেরাই আমাদের নদীগুলোকে দূষিত করছি, অথচ নিজেদের সভ্য জাতি দাবি করছি—এটা পরস্পরবিরোধী।’ তিনি বলেন, ‘ডলফিনের সংখ্যা বাড়লে বুঝতে হবে আমরা নদী রক্ষা করছি; আর কমলে বুঝতে হবে আমরা নদীগুলোকে বিপদে ফেলেছি।’

প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বন সংরক্ষক মো. ছানাউল্যা পাটওয়ারী। অনুষ্ঠানে ‘গাঙ্গেয় ডলফিন সংরক্ষণ হ্যান্ডবুক’-এর মোড়ক উন্মোচন ও ডলফিন বিষয়ক শিক্ষামূলক প্রদর্শনী হয়।