ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পুড়ে যাওয়া আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সের স্ট্রং রুমের ভল্ট থেকে এবার সাতটি আগ্নেয়াস্ত্র চুরির ঘটনা ঘটেছে। ভল্টটি সাম্প্রতিক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডেও অক্ষত ছিল, তবে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, তালা ভাঙা এবং অস্ত্র খোয়া গেছে। এই ঘটনায় বিমান বাংলাদেশের তরফে গত ২৮ অক্টোবর বিমানবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সহকারী ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) মো. জামাল হোসেন এই জিডি করেন। তবে অস্ত্র চুরির ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।
পুলিশ জানায়, ওই ভল্টে মোট ২১টি আগ্নেয়াস্ত্র ছিল, যার মধ্যে ১৪টি পাওয়া গেছে এবং সাতটি নিখোঁজ। খোয়া যাওয়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এম-৪ কারবাইন রাইফেল এবং ব্রাজিলের টরাস সেমি-অটোমেটিক পিস্তল।
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের একজন অতিরিক্ত উপকমিশনার বলেন, ‘আমাদের কাছে বিমানের পক্ষ থেকে স্ট্রং রুম ভাঙার বিষয়ে একটি জিডি হয়েছে। তবে অস্ত্র চুরির ঘটনায় মামলা হয়নি। বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখছে।’
এ ঘটনায় জিডি করেন শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্বে থাকা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সহকারী ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) জামাল হোসেন। তিনি জিডিতে জানান, গত ২৪ অক্টোবর বিকেল সোয়া ৩টার দিকে কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার নেয়ামুল, বিমানের জিএম (কার্গো) নজমুল হুদা, এনএসআইয়ের অতিরিক্ত পরিচালক ফিরোজ রব্বানী, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক ইফতেখার প্রমুখের উপস্থিতিতে মালামালের তালিকা করা হয়। পরে এসব মালামাল ভল্টে রেখে সবার উপস্থিতিতে শিকল দিয়ে তালা লাগিয়ে সিলগালা করা হয়।
জামাল হোসেন আরও জানান, তিনিসহ কর্তব্যরত ডিএমপির পুলিশ ও আনসার সদস্যরা গিয়ে সর্বশেষ ২৭ অক্টোবর রাত পৌনে ১০টার দিকে সিল-তালা দেখে এসেছিলেন। তবে পরদিন সকাল ৭টার দিকে বিমানের নিরাপত্তা শাখার ডিউটি অফিসার জাহাঙ্গীর আলম খানের মাধ্যমে তিনি জানতে পারি যে ওই স্ট্রংরুমের ভল্টের তালা লাগানো নেই। পরে তিনি বিষয়টি বিমানের ডিজিএমকে (সিকিউরিটি) জানিয়ে বিমানবন্দরে আসেন। সেখানে গিয়ে ভল্টের দরজায় কোনো তালা লাগানো দেখা যায়নি।
বিমানবন্দর থানার ওসি তাসলিমা আক্তার বলেন, ‘বিমানবন্দরের ভেতরে কার্গো কমপ্লেক্সের নিরাপত্তার দায়িত্ব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের। আমরা কেবল ফটকের নিরাপত্তা দেখি। এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি কাজ করছে, আমরাও জিডির তদন্ত করছি।’
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক দল ঘটনাস্থল থেকে তালা কাটার সরঞ্জামসহ আলামত সংগ্রহ করেছে। তবে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো এখনো সচল না হওয়ায় ফুটেজ দেখে চোর শনাক্তের সুযোগ নেই।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্তাধীন থাকায় আমরা এখনই কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।’
এদিকে, মূল্যবান সোনা ও হীরা অক্ষত থাকলেও শুধু আগ্নেয়াস্ত্র চুরি হওয়াকে ‘রহস্যজনক’ বলে মনে করছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।












