বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল হাসপাতালে চাহিদামতো বকশিশের টাকা না পেয়ে অক্সিজেন খুলে দেয় ওয়ার্ডবয় ধলু। এতে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত এক রোগীর মৃত্যু হয়। ঘটনার পর থেকে পলাতক ধলুকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) ধলুকে আটক করে র‌্যাব। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান।

তিনি বলেন, বকশিশের টাকা না পেয়ে অক্সিজেন মাস্ক খুলে দেওয়ায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ওয়ার্ডবয় ধলুকে ঢাকা থেকে আটক করেছে র‍্যাব।

এ বিষয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানাবেন র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখা পরিচালক।

পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানান, মৃত বিকাশ চন্দ্র কর্মকার গাইবান্ধা উপজেলার সাঘাটা উপজেলার শিয়ালকুন্ডি গ্রামের বিশু চন্দ্র কর্মচারের ছেলে। সে স্থানীয় একটি স্কুলে ৮ম শ্রেণিতে পড়তো। সংসারে অভাবের কারণে বিকাশ লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতো। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সে বাইসাইকেলে বাড়ি ফিরছিল। রাস্তায় একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে মাথায় গুরুতর আঘাত পায়। পরে তাকে প্রথমে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রাত ১০টার দিকে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

বিকাশের কাকা শচীন চন্দ্র কর্মকার জানান, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কাজ শেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে অক্সিজেনসহ তার ভাতিজাকে তৃতীয় তলায় সার্জারী বিভাগে নেওয়া হয়। ট্রলি বহণকারী হাসপাতালের কর্মচারি আসাদুজ্জামান মীর ধলু বেডে পৌঁছে দেওয়ার পর ২০০ টাকা বকশিস দাবি করে। বিকাশের বাবা কাছে থাকা ১৫০ টাকা দিলে দুলু আরো ৫০ টাকার জন্য বাকবিতন্ডা শুরু করেন।কিন্তু টাকা দিতে না পারায় ক্ষুব্ধ ধলু অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলে।

পরে তাকে মাস্ক লাগাতে অনুরোধ করা হলে সে অস্বীকৃতি জানায়।এতে বাধ্য হয়ে নিজেরা মাস্ক লাগালোর চেষ্টা করেন। এ সময় নাক-মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে বিকাশ মারা যায়। চিকিৎসক এসে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এ সময় রোগির লোকজন পাষান্ড ধলু ওপর চড়াও হলে সে কর্তব্যরত আনসারদের সহযোগিতায় পালিয়ে যায়।

ছিলিমপুর মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই শামিম হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, রোগি মারা যাওয়ার পর উত্তেজনা দেখা দেয়। তখন তারা তৃতীয়তলায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। কিন্তু আগেই অভিযুক্ত কর্মচারি পালিয়ে যায়।

ধলু গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কুমিরাডাঙ্গা গ্রামের জইনুদ্দিন মীরের ছেলে। সে হাসপাতালের খন্ডকালীন কর্মচারি। বুধবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে বিকাশের মরদেহ স্বজনরা নিয়ে গেছেন। দরিদ্র হওয়ায় তারা মামলার ব্যাপারে আগ্রহী নন বলেও জানান তিনি।