আফগানিস্তানের নতুন শাসকগোষ্ঠী তালেবান দেশটির সরকারি কর্মজীবী নারীদের আপাতত ঘরের বাইরে না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। নারীদের কর্মক্ষেত্রে ফেরানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় সাময়িকভাবে তাদের ঘরে থাকতে বলেছে দেশটির নতুন এই শাসকগোষ্ঠী।

মঙ্গলবার কাবুলে সরাসরি সম্প্রচারিত এক সংবাদ সম্মেলনে তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, নারীদের কর্মস্থলে যোগদানে স্থায়ীভাবে বাধা দেওয়া হবে না। তারা যাতে কাজে ফিরতে পারেন, সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ।

এসময় দক্ষ আফগানদের সরিয়ে নেওয়া বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তালেবানের এই মুখপাত্র। একই সঙ্গে পশ্চিমা সামরিক বাহিনীর লোকজন সরিয়ে নেওয়ার জন্য আগামী ৩১ আগস্টের পর আর সময়সীমা বাড়ানো হবে না বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি। তালেবানের মুখপাত্র বলেন, আমেরিকানরা ‌প্রকৌশলীদের মতো ‘আফগান বিশেষজ্ঞদের’ নিয়ে যাচ্ছে। আমরা তাদের এই প্রক্রিয়া বন্ধের আহ্বান জানাই।

আমেরিকান নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনী হাজার হাজার মানুষকে কাবুল থেকে সরিয়ে নেওয়ার তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তালেবানের শীর্ষ মুখপাত্র মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। তালেবানের এই মুখপাত্র তাদের আগের ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করে বলেন, লোকজনকে পুরোপুরি সরিয়ে নেওয়ার সময়সীমা আগামী ৩১ আগস্টের পর আর বৃদ্ধি করা হবে না।

মুজাহিদ বলেন, তাদের বিমান আছে, বিমানবন্দর আছে। সুতরাং তাদের নাগরিক এবং কন্ট্র্যাক্টরদের দ্রুত সরিয়ে নেওয়া উচিত। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, নির্ধারিত সময়েই সব বিদেশি নাগরিককে সরিয়ে নেওয়ার কাজের শেষ দেখতে চায় তালেবান। তবে আফগানদের দেশ ছাড়ার অনুমতি দেওয়ার পক্ষে তালেবানের সমর্থন নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিদেশি দূতাবাসগুলোকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে তাদের কার্যক্রম স্থগিত অথবা বন্ধ না করার আহ্বান জানান তালেবানের এই নেতা। তিনি বলেন, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসার পাশাপাশি হাসপাতাল, স্থানীয় সরকার এবং টেলিভিশন ও রেডিও স্টেশন আবারও চালু হচ্ছে।

বিদেশে যাওয়ার আশায় কাবুলের বিমানবন্দরে জমায়েত হাজার হাজার আফগানকে বাড়িতে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ। তালেবানের মুখপাত্র বলেন, ভয়ের কিছু নেই এবং তাদের বাড়িতে ফেরা উচিত। তিনি বলেন, আমরা তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিচ্ছি। আমরা অতীত ভুলে গিয়েছি। কারও বিরুদ্ধে কোনও ধরনের প্রতিশোধ নেওয়া হবে না।

গত ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুলের দখল তালেবানের হাতে যাওয়ার পর দেশটির ক্ষমতাসীন আশরাফ গনি নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হয়। তালেবানের অতীত শাসন ফেরার ভয়ে হাজার হাজার আফগান মরিয়া হয়ে দেশ ছাড়ার চেষ্টায় কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন।

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, মিডলইস্ট মনিটর।