পরিচ্ছন্ন রাজশাহী নগরীর একটি ঐতিহ্য বলতে গেলে বৃক্ষরাজি আর হরেক রকম পাখিদের আবাস। তবে কথিত নগরায়নের ফাঁদে পড়ে অস্তিত্ব হারাচ্ছে বিলুপ্তপ্রায় পাখিরা। বাংলাদেশের আইনে পাখি শিকার নিষিদ্ধ ও দন্ডনীয় হলেও সুযোগ পেলেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে পাখি খেকোরা। বৃক্ষের সঙ্গে চলে পাখি নিধনের মহা উৎসব। এবার রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল চত্বরে উদাসীনতায় আবাসস্থলসহ প্রাণ হারালো শতাধিক বিলুপ্তপ্রায় শামুখখোল পাখি।

রামেক হাসপাতালের সামনে দীর্ঘদিন থেকে এই পাখিগুলো বসবাস করে আসছিলো। গতকাল শনিবার বিকেলে পাখির আবাসস্থল গাছ কাটা হলে মাটিতে আছড়ে পড়ে শাবকসহ শতাধিক পাখি। এসময় হুমড়ি খেয়ে পড়ে পড়ে পাখি খেকোরা। বড় পাখিগুলো নিয়ে পালিয়ে যায় অনেকে। হাসপাতালের নির্মাণ শ্রমিকরাও মহা উৎসবে মেতে উঠে। জবাই করে ২০ থেকে ২৫ টি শামুখখোল পাখি। এসময় গাছ থেকে পড়ে ৩০ টির বেশি শামুখখোল শবক মারা যায়। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন পরিবেশবীদ ও পাখি প্রেমিকরা।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শ্রমিকরা ড্রেনের নির্মাণ কাজ করছিলো। সঙ্গে গাছও কাটা হচ্ছিলো। এক সময় গাছটি পড়ে গেলে পাখিগুলো আছড়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে শাবক পাখিগুলো মারা যায়। অনেকে বড় পাখিগুলো নিয়ে পালিয়ে যায়। এরমধ্যে নির্মাণ শ্রমিকরাও কিছু পাখি জবাই করে। ঘটনাটিকে মর্মান্তিক বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন পরিবেশবীদরা। একইসঙ্গে যাদের অবহেলায় এমন ঘটনা ঘটছে তাদের আইনের আওতায় আনারও দাবি জানান তারা।

এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, হাসপাতালের কয়েকটি শুকনা গাছে কাটতে টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। যেখানে পাখিদের কোনো বাসা নেই। আর ২০ টি মতো পাখির মারা যাওয়ার কথা তিনি শুনেছেন। তিনি আনসার পাঠিয়েছিলেন। তবে পরে কি হয়েছে এবিষয়ে জানেন না।

তিনি আরও জানান, হাসপাতালের পাখি হত্যার কোন সুযোগ নেই। যারা পাখি হত্যার চেষ্টা করবেন তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে রাজশাহী বণ্যপ্রাণি সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর বারি জানান, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। যে ভিডিও তিনি দেখেছেন তাতে গা শিউরিয়ে ওঠে। এর আগে তিনি পাখি ও বৃক্ষ নিয়ে হাসপাতালের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ পাখিদের কোনো ধরণের ক্ষতি করবেন না বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেই এমন ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টির অনেক গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।