টিভি পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা মীর সাব্বির তার মুক্তিপ্রতীক্ষিত সিনেমা ‘রাত জাগা ফুল’ নিয়ে চমকের পর চমক নিয়ে চলেছেন। সেটা ট্রেলারে, গানে কিংবা প্রমোশন কৌশলে। তবে এর সবটাই ছিল ভার্চুয়াল। তবে এবারই প্রথম সরাসরি ডেকে নিলেন সাংবাদিকদের। বুধবার সিনেমার শিল্পী-কুশলী নিয়ে মীর সাব্বির বসেন অভিজাত ঢাকা ক্লাবে। ফুলে সাজানো অতিথি বসার মঞ্চ তৈরি থাকলেও এদিন তিনি ও তার দল বসেননি সেখানে। সাংবাদিকদের মাঝেই দর্শকসারির চেয়ার টেবিলে বসলেন গোল হয়ে। বললেন, ‘আমি চেয়েছি আড্ডা দিতে, সংবাদ সম্মেলন নয়। সংবাদ সম্মেলনে একটা দূরত্ব থাকে। অথচ আমি তো মনে করি, আমরা একই আত্মা। আজ যারা এখানে এসেছেন বা আসতে পারেননি, প্রত্যেকেই আমার সিনেমার সদস্য।’
এখানেই নিয়ম ভাঙার গল্পটি শেষ নয় নির্মাতা-অভিনেতা-প্রযোজক-গীতিকবি মীর সাব্বিরের। সাধারণত সংবাদ সম্মেলনে বা প্রিমিয়ার শোতে অতিথি সারিতে বক্তার বেশে থাকেন সিনেমার নির্মাতা-প্রযোজক আর প্রধান বা তারকা শিল্পীরা। অনুষ্ঠানজুড়ে তারাই কথা বলেন। কিন্তু সেই রীতিটা পাল্টে দিলেন তিনি।
মীর সাব্বির চারপাশে নিয়ে বসলেন ভিডিও সম্পাদক, রূপসজ্জাকর, লাইন প্রডিউসার থেকে শুরু করে সিনেমার সঙ্গে যুক্ত প্রায় সব চরিত্রশিল্পী নিয়ে। ফারহানা নিশোর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুটা হলো ভিডিও সম্পাদক আশরাফুল আলমের অনুভূতি প্রকাশের মধ্য দিয়ে, ‘আমি জীবনে অনেক নাটক-সিনেমার ভিডিও সম্পাদনা করেছি। কিন্তু এমন নির্মাতা পাইনি। যিনি সম্পাদককে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন কাজটি করার জন্য। আমি শুধু মুগ্ধ হয়েছি সাব্বির ভাইয়ের মেধা ও আন্তরিকতা দেখে। সত্যিকারের শিল্পী না হলে সংশ্লিষ্ট শিল্পীদের এভাবে স্বাধীনতা দিতে জানতেন না।’
এরপর একে একে কথা বলেন রূপসজ্জাকর জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া, লাইন প্রডিউসার মিঠু, স্বল্প উপস্থিতির চরিত্রে অভিনয় করা নরেশ ভূঁইয়া, আহসানুল হক মিনুসহ অনেকেই।
নরেশ ভূঁইয়ার কথায়, ‘সাব্বিরকে দেখে মনে হতো না, ও জীবনে সিনেমা বানাতে পারবে! এটা অনেক আগের কথা বলছি। তো এরপর একদিন আমি নিজেই স্বপ্ন দেখেছি, সাব্বির একটা সিনেমা বানাচ্ছে। পরদিন ওকে কথাটি বললাম। অনুরোধ করলাম, সাব্বির তুই সিনেমা বানা। পারবি। সেই সাব্বির ঠিকই অসামান্য একটি সিনেমা বানালো। এবং সেখানে আমি ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমি ওর কাজে মুগ্ধ ও গর্বিত।’
আরেক অভিনেতা আহসানুল হক মিনু বললেন, ‘এই সিনেমায় আমার চরিত্রটিও বেশ ছোট। জীবনে অনেক ছবিতে কাজ করেছি, সব নাম মনেও নাই। ৩৬টা হবে। তারপর সাব্বিরের ডাক পাই। এটুকু বলবো, এই ছবিতে বাংলাদেশের এমন কিছু নেই যা সাব্বির তুলে আনেনি।’
সিনেমার আরেকটি ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করা রাশেদ মামুন অপুর অভিব্যক্তি, ‘সাব্বির ভাই টিভি মিডিয়ায় এত এত কাজ করেছেন, জীবনে একটি কাজেও আমাকে নেননি। অবশেষে ডাক পেলাম তার সিনেমায়। চরিত্রটি ছোট হতে পারে, কিন্তু আমি একটা পাসিং শটকেও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখি সবসময়। এটুকু বলি, আমি অন্য এক মীর সাব্বিরকে দেখলাম এই সিনেমার ক্যামেরার পেছনে ও সামনে। যেটা আমি দূর থেকে কখনও ধারণা করিনি।’
এরপর কথা বলেন ছবিটির প্রধান নায়িকা জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী, ‘মিশন এক্সট্রিম ছিল আমার জন্য উচ্ছ্বাসের একটা বিষয়। ছবিটির ধরন ও আমার প্রথম ছবি হিসেবে। সেই পরিস্থিতি সামলে এখন আমি রিফ্রেশমেন্ট করছি ‘রাত জাগা ফুল’ দিয়ে। আমার বিশ্বাস, এই ছবি যিনি দেখবেন তিনিও আমার মতোই একটা রিফ্রেশমেন্ট মেজাজে চলে যাবেন। তৃপ্তি পাবেন। মনের ও চোখের।’
সবার শেষে কথা বলেন এই ছবির মূলনায়ক মীর সাব্বির। তিনি বলেন, ‘বেশি কথা বলে তো লাভ নাই, কাজেই প্রমাণ দিতে হবে। এটুকু বলি, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের শেষ উপহার হয়ে সবার সামনে আসছে আমাদের ছবিটি। এটি দিয়ে যেমন শেষ হচ্ছে বছর, তেমনই শুরুটাও হচ্ছে নতুন বছরের। বাকিটা দর্শকদের ওপর ছেড়ে দিলাম।’
সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ‘রাতজাগা ফুল’-এর সহ-প্রযোজক হিসেবে আছে মীর সাব্বিরেরই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ফুলঝুড়ি মিডিয়া লিমিটেড। এতে আরও অভিনয় করেছেন দিলারা জামান, আবুল হায়াত, শর্মিলী আহমেদ, ফজলুর রহমান বাবু, ডা. এজাজুল ইসলাম, নাজনীন চুমকী, জয়রাজ, আবু হুরায়রা তানভীরসহ অনেকে।
অভি কথাচিত্রের পরিবেশনায় ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর দেশের প্রায় ৩০টি প্রেক্ষাগৃহে।