স্বজন হারানোর শোকে কাতর ইউক্রেনে মিসাইল হামলায় নিহত প্রকৌশলী হাদিসুর রহমানের পরিবার। তাদের কান্না-বিলাপ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মানুষকে আপ্লুত করেছে। ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে হামলার কবলে পড়া বাংলাদেশি ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের তৃতীয় প্রকৌশলী হাদিসুর রহমানের মরদেহ দেশে এসেছে। সকাল থেকে বিমানবন্দরে লাশ গ্রহণের জন্য অপেক্ষা করছিল তার পরিবার। দেশে ফিরে বিয়ে করার কথা যার, সে সাদা কাফনে কফিন বন্ধি হয়ে দেশে ফিরলো।
নিহত হওয়ার ১১ দিন পর সোমবার বেলা ১২টা ৬ মিনিটে তার মরদেহ দেশে আসে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেট এএইচএম তৌহিদ-উল আহসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘টার্কিশ এয়ারলাইনসের টিকে-৭২২ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রকৌশলী হাদিসুর রহমানের মরদেহ এসেছে।’
বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের সামনে মরদেহ গ্রহণ করতে অপেক্ষা করছিলেন হাদিসুর রহমানের খালা শিরীন আক্তার মমতাজ, চাচাতো ভাই সোহাগ হাওলাদার, হাদিসুরের ছোটভাই গোলাম মাওলা ও চাচা হারুন অর রশীদ। তাদের চোখের জল আর বিলাপ আশপাশের মানুষেরও করেছে শোকার্ত। কোন সান্ত্বনা তাদের স্বজন হারানোর বেদনাকে বিন্দুমাত্র দমাতে পারছে না।
বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কান্না করছিলেন হাদিসুরের খালা শিরীন আক্তার মমতাজ। হাদিসুরের নাম ধরে শোকে বিলাপ করছিলেন তিনি। খালার সঙ্গে হাদিসুরের সর্বশেষ কথা হয় ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে। মমতাজ বেগম বিলাপ করে বলেছেন, ‘ওরে বাবা, কাফনের কাপড় পইরা তুই কেন আইলি রে? ওরে বাবা রে, ওরে, হাদিসুর রে। এর আগে আসার পর কইছি, তুই বিয়া কইরা যা।’
শিরীন আক্তার মমতাজ বলছিলেন, ‘২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে আমারে কয় খালামনি তুমি মাইয়া দেইখা রাইখো, আমি আর অমত করমু না। আমি আইসা বিয়া করমু। ও বলতো, খালা আমি নিরাপদে আছি। আন্তর্জাতিক জাহাজে হামলা হবে না। ও বাবা, তুমি কই নিরাপদে গেলা।’
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিপিং করপোরেশনের মালিকানাধীন ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে কাজ করতেন প্রকৌশলী হাদিসুর রহমান। ২৯ জন নাবিক ও ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পৌঁছায় জাহাজটি। সেখানে ২ মার্চ জাহাজে গোলার আঘাতের ঘটনায় প্রাণ হারায় হাদিসুর। সিরামিকের কাঁচামাল ‘ক্লে’ পরিবহনের জন্য জাহাজটি তুরস্ক থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় পৌঁছায়। সেখান থেকে কার্গো নিয়ে ইতালি যাওয়ার কথা ছিল।
হাদিসুরের চাচাতো ভাই সোহাগ হাওলাদার বলেন, ‘এবার দেশে এসে হাদিসুরের বিয়ে করার কথা ছিল। আমার ভাই ফিরলো লাশ হয়ে।’
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) সকাল ১০টায় তাদের গ্রামের বাড়িতে হাদিসুরকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।