আকবর আলীর নেতৃত্বে দুই বছর আগে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছিল বাংলাদেশ। বৈশ্বিক কোনও টুর্নামেন্টে ওটাই বাংলাদেশের প্রথম কোনও ট্রফি জয়। এবারও একই স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিল ক্যারিবীয় দ্বীপে। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতায় কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হলো বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। শক্তিশালী ভারতের বোলিংয়ের বিপক্ষে ১১১ রানেই অলআউট হয় লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। সেই রান ১১৫ বল হাতে রেখে ৫ উইকেট হারিয়েই টপকে যায় ভারত।
করোনার কারণে এবারের দলটি নিয়ে খুব ভালো প্রস্তুতি নিতে পারেনি বিসিবির গেম ডেভলপমেন্ট বিভাগ। বিশেষ করে ভালো মানের ব্যাটার তৈরি করতে পারেনি তারা। শুরু থেকেই বর্তমান দলটির ব্যাটিং নিয়ে দুঃচিন্তায় ছিলেন কোচরা। বিশেষ করে টপ অর্ডার নিয়ে ভুগতে হয়েছে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। তবু বিশ্বকাপের মঞ্চে গিয়ে প্রত্যাশা ছিলো মাহফিজুল-নাবিল-ইফতেখার-ফাহিমরা ভালো কিছু করবেন। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণেই শিরোপা ধরে রাখতে পারলো না ভবিষ্যৎ সাকিব-তামিমরা।
শনিবার ভারতের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ছিটকে যাওয়ার ম্যাচেও কাঠগড়ায় টপ অর্ডার ব্যাটারদের দাঁড় করাতে হবে। বাংলাদেশের বোলার-ফিল্ডাররা যেভাবে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন, ঠিক সেভাবে লড়াইটা করতে পারলে ম্যাচটি বাংলাদেশের হতে পারতো। স্কোরবোর্ডে অন্তত আরও ৫০টি রান থাকলে ম্যাচের পরিস্থিতি নিশ্চিতভাবেই ভিন্ন হতো!
অ্যান্টিগার স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ দল ৩৭.১ ওভারে ১১১ রানে অলআউট হয়। মামুলি এই লক্ষ্যে খেলতে নেমে ভারতের ব্যাটারাও বাংলাদেশ বোলাদের কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়ে। রানের খাতা খোলার আগেই ভারতের ওপেনার হারনুর সিংহকে সাজঘরে ফেরান তানজিম হাসান সাকিব। এরপর অবশ্য অনেকক্ষণ উইকেটের অপেক্ষায় থাকতে হয় রাকিবুলদের।
দুই প্রান্ত থেকে ভারতের রানের চাকা আটকে রাখতে পারলেও উইকেট তুলে নিতে পারছিলেন না বোলাররা। অবশেষে ২০তম ওভারে পেসার রিপন মণ্ডল ৬৫ বলে ৪৪ রান করা রাজবর্ধন হাঙ্গারগকে পয়েন্টে নাবিলের ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরত পাঠান। ১২ রানের ব্যবধানে রিপন আরও তিন উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তুলেছিলেন। কিন্তু স্কোরবোর্ডে যথেষ্ট স্কোর না থাকায় ১১৫ বল আগেই ভারত ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে। বাংলাদেশকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নবমবারের মতো সেমিফাইনাল খেলার সুযোগ করে নেয় ভারত।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে দারুন বোলিং করেছেন রিপন মণ্ডল। ৯ ওভারে ৩১ রান খরচায় চারটি উইকেট নিয়েছেন এই পেসার। বাকি একটি উইকেট নিয়েছেন আরেক পেসার তানজিম সাকিব।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের ব্যাটাররা বিশ্বকাপের মঞ্চে আরও একবার নিজেদের ব্যাটিং ব্যর্থতার প্রদর্শনী করলেন। গ্রুপ পর্বের উদ্বোধনী ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৭ রানে অলআউট হওয়া বাংলাদেশ শনিবার ভারতের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ১১১ রানে অলআউট হয়েছে। দুই স্পিনার রবি কুমার ও ভিকি ওস্তালের ঘূর্ণিতে টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডার ব্যাটারদের মধ্যে কেবলমাত্র আইচমোল্লা ডাবল অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পেরেছেন। বাকি সবার স্কোর যেন মোবাইল নাম্বারের ডিজিট।
উইকেটে মেহরাব হোসেন ও আশিকুজ্জামানের গুরুত্বপূর্ণ ৫০ রানের জুটিতে ১০০ পেরুতে পারে বাংলাদেশের যুবারা। মেহরাব ৪৮ বলে ৬ চারে ৩৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন। ব্যাটিং ব্যর্থতার এমন দিনে গুরুত্বপূর্ণ দুই ব্যাটার রান আউটের শিকার হয়েছেন। এক প্রান্তে আগলে ব্যাটিং করা আইচ মোল্লা সিঙ্গেল নিতে গিয়ে রান আউটে কাটা পড়েন। ৪৮ বলে ১ ছক্কায় ১৭ রান করেন আইচ। এছাড়া মেহরাবের সঙ্গে ৫০ রানের জুটি গড়া আশিকুজ্জামান ২৯ বলে ১ চারে ১৬ রান করে আউট হন। সবমিলিয়ে ৩৭.১ ওভারে ১১১ রানে অলআউট হব লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।
ভারতের বোলারদের মধ্যে রবি কুমার ১৪ রানে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া বাঁহাতি স্পিনার ভিকি ওস্তাল নিছেন দুটি উইকেট।