এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় ও বৈঠক উপলক্ষে সরকারি সফরে নিউইয়র্ক অবস্থান করছেন বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
গত ২৪ নভেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের রেজুলেশন গৃহীত হওয়ার পরপরই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের এই সফর বিশেষ গুরুত্ব বহণ করে। সফরকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ সহিদ; জাতিসংঘ অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সভাপতি কোলেন ভিক্সেন কিলাপাইল; স্বল্পোন্নত দেশ, ভূ-বেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ এবং উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর উচ্চ প্রতিনিধি ও আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল কোর্টিনে র্যাট্রে; এবং জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভোলপমেন্ট পলিসি’র সচিব রোন্যাল্ড ম্যোলেরাস্ এর নেতৃত্বাধীন একটি বিশেষজ্ঞ দলের সাথে আলাদা আলাদা ফলপ্রসু বৈঠক করেন।
জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণের সাথে অনুষ্ঠিত এসকল বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণ ছিল বাংলাদেশের জনগণের দীর্ঘদিনের লালিত আকাঙ্ক্ষা। কোভিড অতিমারি সৃষ্ট সকল প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের এই আকাঙ্ক্ষা পূরণে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ গ্রহণ করেন। এলডিসি থেকে চুড়ান্তভাবে উত্তরণের সাফল্য ঘরে তুলতে প্রধানমন্ত্রী উক্ত রূপকল্পদুটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছেন।
কাতারের দোহায় ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠেয় ৫ম এলডিসি সম্মেলনে গ্রহণের জন্য ‘এলডিসি’র দেশগুলোর পরবর্তী ১০ বছরের কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক ডকুমেন্টটির নেগোসিয়েশনে বাংলাদেশের নেতৃত্বদানের বিষয়টি উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ সমূহের প্রতি আলোকপাত করেন, বিশেষকরে তিনি আন্তর্জাতিক সহায়তা ব্যবস্থাসমূহের যে সুবিধা এলডিসিভূক্ত দেশসমূহ পায় তা উত্তরণ পরবর্তী সময়ে অব্যাহত রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন। দোহা কর্ম-পরিকল্পনায় যাতে উত্তরিত ও উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর জন্য প্রণোদনা ভিত্তিক উত্তরণ সহায়তা কাঠামো নিশ্চিত করা হয়, সে বিষয়েও জোর দেন বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এক্ষেত্রে তিনি জাতিসংঘের আলোচ্যসূচিতে ‘উত্তরণ’ ইস্যুটিকে অধিকতরত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়ার জন্য আন্ত: এজেন্সি সমন্বয় বৃদ্ধির সুপারিশ করেন।
বৈঠকসমূহে জাতিসংঘ নেতৃবৃন্দ এবং বিশেষজ্ঞরা মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে জাতিসংঘের নতুন উদ্যোগ যেমন ‘সাসটেইন্যাবল গ্রাজুয়েশন সাপোর্ট ফ্যাসিলিটি’ এবং ‘এনহ্যান্সড্ গ্রাজুয়েশন মনিটরিং’ সম্পর্কে অবহিত করেন যা উত্তরিত দেশসমূহের যে কোনো সঙ্কটে বা কাঙ্খিত অবস্থান থেকে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিলে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। দোহা কর্ম-পরিকল্পনার নেগোসিয়েশনে নেতৃত্বদানের জন্য জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা এবং কানাডার স্থায়ী প্রতিনিধি রবার্ট রে এর প্রশংসা করেন জাতিসংঘের নেতৃবৃন্দ।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জাতিসংঘ সদরদপ্তরের নর্থ লনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু বেঞ্চ পরিদর্শন করেন। উল্লেখ্য বেঞ্চটি এবছর সেপ্টেম্বরে ৭৬তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের সপ্তাহে যোগদানের সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন। এছাড়া বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কর্মকর্তাগণের সাথেও এক সভায় মিলিত হন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি কর্মকর্তাগণকে সরকারের অগ্রাধিকারভূক্ত বিষয়সমূহ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করেন।
জাতিসংঘের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের এসকল বৈঠকসমূহে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মিজ্ শরীফা খান উপস্থিত ছিলেন।