প্রাণঘাতী ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে শাবাব সারোয়ার (১০) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শাবাব বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন নিউজের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর সারওয়ার হোসেনের একমাত্র ছেলে। গত বুধবার রাতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শিশু হাসপাতালে আরও চার শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শফি আহমেদ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়ছে। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু সন্দেহে ১০ জনের তথ্য রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনা সম্পন্ন করেনি আইইডিসিআর।
হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২১৮ জন। এর মধ্যে ঢাকায় আক্রান্ত ২০৮ জন, ঢাকার বাইরে ১০ জন। বর্তমানে দেশের হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছেন ১ হাজার ৫৫ জন। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১ হাজার ১২ জন। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৯০১ জন।
গতকাল পর্যন্ত স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ছিলেন ৪৬৩ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি ১৫৫ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ৪১ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি ১৩৮ জন। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৮১২ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ২ হাজার ৯৪৫ জন।
রাজধানীর বাইরে ঢাকাসহ অন্য বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি ১৪৪ জন। আক্রান্তের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বাড়ায় উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক শফি আহমেদ বলেন, শিশুদের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিন প্রায় ১০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। ডেঙ্গু ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম নিয়ে অনেক শিশু আসছে। এ পর্যন্ত চারজন শিশু মারা গেছে।
অধ্যাপক শফি আহমেদ বলেন, আউটডোরেও অনেক রোগী আসছে। জুলাই মাসে রোগীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে, এ মাসেও ঊর্ধ্বমুখী। তিনি বলেন, শিশুদের জন্য করোনাভাইরাসের চেয়ে ডেঙ্গু বেশি বিপজ্জনক। করোনায় শিশুদের মাইল্ড সিম্পটম হয় এবং তাদের ঝুঁকিটা কম থাকে। কিন্তু ডেঙ্গুতে শিশুরা অনেক ঝুঁকিতে থাকে। শিশুদের শরীরে কামড়াতে মশার সুবিধা হয়। প্রায় বিনা বাধায় শিশুর পাতলা চামড়া ভেদ করে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশা কামড়ায়।
শিশু বিশেষজ্ঞ শফি আহমেদ বলেন, মশার কামড় থেকে বাঁচাতে মশারির পাশাপাশি ক্রিম ও রিপেলেন্ট মাখানো যেতে পারে। তাই জ্বর আসলে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু টেস্টও করাতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া জ্বর কমানোর কিংবা ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যাবে না।