রণক্ষেত্রে পরিণত হলো ভারতের রাজ্যসভা। বিরোধীদের অভিযোগ, নারী এমপিদের নিগ্রহ করেছে পার্লামেন্টের মার্শালরা। পাল্টা বিজেপির দাবি, মার্শালদের ধাক্কা মেরেছে বিরোধীরা। এক নারী নিরাপত্তাকর্মীর গলা টিপে ধরারও চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। আর এ নিয়েই ঘটেছে তুলকালাম কাণ্ড। এসবের মধ্যেই এবারের অধিবেশন শেষ করে দেওয়া হয়েছে।
বুধবার রাজ্যসভায় সাধারণ বিমা সংস্থার ব্যবসা জাতীয়করণ সংশোধনী নামে একটি বিল পেশ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সেজন্য অধিবেশন বাড়ানোর আর্জি জানায় সরকার। যদিও বিরোধীরা দাবি করতেন থাকেন, বৃহস্পতিবারও বিলটি পেশ করা যেতে পারে। বিরোধীদের সেই আপত্তি গ্রাহ্য করা হয়নি। এ নিয়ে তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। ‘বন্ধু’ শিল্পপতিদের স্বার্থে নরেন্দ্র মোদি সরকার এই বিল এনেছে বলে দাবি করতে থাকেন বিরোধীরা। সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
এক পর্যায়ে তারা ‘চেয়ার’-এর দিকে আক্রমণ করতে যেতে উদ্যত হয়। তবে চেয়ারে থাকা ডেপুটি চেয়ারম্যান ভুবনেশ্বর কলিতার দিকে যাওয়ার আগেই তাদের আটকানো হয়। প্রায় ৫০ জন নারী ও পুরুষ নিরাপত্তারক্ষী মিলে কার্যত তাকে ঘিরে রাখেন। বিরোধীদের থামাতে নারী এমপিরা যেখানে বিরোধিতা করছিলেন, সেখানে পুরুষ নিরাপত্তারক্ষী এবং যেখানে পুরুষ এমপিরা ছিলেন, সেখানে নারী নিরাপত্তারক্ষীদের মোতায়েন করা হয়।
তাতে অবশ্য কোনও লাভ হয়নি। বরং কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, বাম, ডিএমকে-সহ বিরোধী দলগুলো এককাট্টা হয়ে বিরোধিতা চালিয়ে যেতে থাকে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, কয়েকজন এমপিকে কাগজ ছিঁড়তে দেখা গিয়েছে। যা সম্ভবত বিলের কপি হবে। তা ‘চেয়ার’ ও কর্মকর্তাদের দিকে ছুড়ে দিতে দেখা গিয়েছে। কয়েকজন নিরাপত্তাবলয় ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন। কংগ্রেস দলীয় এমপি রিপুন বোরা মার্শালদের ওপর দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন। তাতে অবশ্য সফল হননি। কয়েকজন এমপি নিজের আসনেই দাঁড়িয়েই পড়েন। তৃণমূলের দোলা সেন আবার গলায় ‘গণতন্ত্রের হত্যা’ প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।
কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, ‘আজ রাজ্যসভায় যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। আমাদের সদস্যের থেকে মার্শালের সংখ্যা বেশি ছিল। তারা আমাদের নারী সদস্যদের হেনস্থা করেছেন। পার্লামেন্টের ভেতরও নারীরা সুরক্ষিত নন।’
এক পর্যায়ে মার্শালদের সংখ্যা বেশি হওয়ার দাবি তুলে ওয়াকআউট করেন বিরোধীরা। এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ার বলেন, ‘আমার ৫৫ বছরের সংসদীয় জীবনে কোনও দিন নারী এমপিদের ওপর এভাবে আক্রমণ নেমে আসতে দেখিনি। বাইরে থেকে রাজ্যসভায় ৪০ জনের বেশি পুরুষ ও নারীকে আনা হয়েছিল। এটা বেদনাদায়ক। এটা গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ।’
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই অবশ্য ধ্বনিভোটে বিল পাস করিয়ে নিয়েছে মোদি সরকার। তবে রাজ্যসভার নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল অভিযোগ করেন, এক নারী নিরাপত্তারক্ষীর গলা টিপে ধরার চেষ্টা করেছিলেন একজন এমপি। ‘বিরোধীদের হাঙ্গামা’ পর্যালোচনার জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠনের প্রস্তাব রেখেছে সরকার পক্ষ। কড়া ব্যবস্থা নেওয়ারও আর্জি জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ভারতে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ থেকে বিক্ষোভরত সদস্যদের বের করে দেওয়া সেখানে দায়িত্বরত মার্শালদের কাজের মধ্যে পড়ে। কিন্তু উচ্চকক্ষে তাদের কাজ অনেকটাই আনুষ্ঠানিক। সেখানে তারা সভাপতি বা মুখ্য কর্মকর্তাদের কাছে গিয়ে কার্যপ্রণালী শুরুর কথা জানান। এছাড়াও নথিপত্র খোলা, বন্ধ করা ইত্যাদি কাজেও তারা সহায়তা করেন।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, এনডিটিভি।