সময় বাঁচাতে কেনা খাবারের প্রতি নির্ভর করে থাকছেন অনেকে। এখন তো দোকানে গিয়ে কেনার ঝামেলাও নেই। খাবার অর্ডারের নানা অ্যাপ আছে। অর্ডার করলে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে যায় খাবার। সেসব খাবার সুস্বাদু, সন্দেহ নেই। কিন্তু স্বাস্থ্যকর কি? পিজ্জা, বার্গার, স্যান্ডুইচসহ নানা জাঙ্ক ফুড বা ফাস্ট ফুড এখন ঢুকে গেছে আমাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায়। সেইসঙ্গে দাওয়াত কিংবা পার্টিতে নানা মুখরোচক খাবার তো আছেই।
সুস্থ থাকার জন্য যেসব খাবার জরুরি, সেসবের বদলে আমরা খাচ্ছি এমন খাবার যেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়। বেশিরভাগই পুষ্টিকর নয়। তেল-মশলা ও চর্বি নিয়মিত পেটে যাওয়ার কারণে শরীরে জমতে থাকে চর্বি। ফলে বাড়তে থাকে কোলেস্টেরল। সেখান থেকে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের মতো দুর্ঘটনাও অস্বাভাবিক নয়। এরকমটি ঘটছে অনেক ক্ষেত্রেই। সুস্থ থাকতে চাইলে শরীরে কোনোভাবেই কোলেস্টেরল বাসা বাঁধতে দেওয়া যাবে না।
কোলেস্টেরল হলো তিন প্রকার। ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল, খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কোলেস্টেরল। এর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হলো তিন নম্বরটি। খারাপ কোলেস্টেরলের থেকেও ট্রাইগ্লিসারাইড কোলেস্টেরল শরীর অসুস্থ করার জন্য বেশি দায়ী থাকে। কোলেস্টেরল সরাসরি হার্টে আঘাত করে। এটি হার্টের রক্তচলাচল বন্ধ করে দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে।
ওজন বেড়ে যাওয়া, অসচেতনতা, বয়স, মাদক ও অ্যালকোহল গ্রহণের ফলে শরীরে কোলেস্টেরল বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চলতে হবে। সেইসঙ্গে নিজেও মেনে চলতে হবে কিছু উপায়। প্রতিদিনের খাবারে কিছু উপাদান যোগ করলে সেগুলো আপনার শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। জেনে নিন সেই খাবারগুলো সম্পর্কে-
গ্রিন টি খান নিয়মিত
আমাদের শরীরের জন্য পানির পরে যে তরল উপকারী সেটি হলো গ্রিন টি। এতে থাকে প্রচুর পলিফেনোল। এটি উপকারী যৌগ, যা শরীরের নানা প্রয়োজনে লাগে। আপনি যদি নিয়মিত গ্রিন টি পান করে থাকেন তবে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলগুলো কমে যাবে এবং ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পাবে। প্রতিদিন দুই-তিন কাপ গ্রিন টি পান করা যাবে।
রসুন খাওয়াও উপকারী
সবার রান্নাঘরেই থাকে উপকারী এই ভেষজ। বিভিন্ন রান্নার স্বাদ-গন্ধ বাড়াতে এর জুড়ি নেই। সেইসঙ্গে এটি শরীরের জন্য নানা প্রয়োজনীয় উপাদান দিয়ে ভরা। এতে আছে অ্যামাইনো অ্যাসিড, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন ও অর্গানোসালফার যৌগ। এসব উপাদান শরীরে জমে থাকা খারাপ কোলেস্টেরল দূর করতে কাজ করে। প্রতিদিন একটি বা অর্ধেকটা রসুন খেলে খারাপ কোলেস্টেরল কমে যায় ৯ শতাংশ পর্যন্ত।
আমলকী খাবেন যে কারণে
আমলকীতে প্রচুর ভিটামিন সি এবং ফেনোলিক যৌগ থাকে। এছাড়াও থাকে খনিজ পদার্থ এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড। বহু যুগ ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় আমলকীর ব্যবহার হচ্ছে। আপনি যদি নিয়মিত আমলিক খান তবে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। প্রতিদিন দুটি কিংবা একটি আমলকী খান। এটি আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।
ক্ষতিকর কোলেস্টেরেল দূর করে ধনিয়া
শরীর থেকে ক্ষতিকর কোলেস্টেরেল দূর করতে সাহায্য করে ধনিয়া। এই ভেষজ মশলার রয়েছে অনেকগুলো গুণ। এতে আছে ভিটামিন এ, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সি ও ফলিক অ্যাসিড। এগুলো শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। তাই খাবার তৈরিতে ধনিয়া রাখুন।
উপকারী মশলা মেথি
ধনিয়া ছাড়াও কোলেস্টেরল তাড়াতে আরেকটি উপকারী মশলা হলো মেথি। এটি রান্নার স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি শরীরের নানা উপকার করে থাকে। এতে আছে প্রচুর ভিটামিন ই, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি, অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রপার্টিজ। নিয়মিত মেথি খেলে তা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল দূর করার পাশাপাশি লিভারের সংশ্লেষণ কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন এক চামচ মেথি খেলে সুস্থ থাকা সহজ হবে।