হাসান মাহমুদের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেট সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ দল। সিলেটে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ একদিনের ক্রিকেট খেলায় স্বাগতিক বাংলাদেশ ১০ উইকেটে হারিয়েছে আয়ারল্যান্ডকে। য়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশি পেসারদের বোলিং তোপে মাত্র ১০১ রানে অলআউট হয়ে যায় সফরকারীরা। জবাবে রান তাড়া করতে নেমে ১৩ ওভার ১ বলে কোনো উইকেট না হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় টাইগার বাহিনী।

বৃহস্পতিবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষটিতে আয়ারল্যান্ডকে ১০ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ২৮ ওভার ১ বল খেলে সব উইকেট হারিয়ে ১০১ রান করে আইরিশরা। জবাব দিতে নেমে ২২১ বল হাতে রেখে ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ। একইসঙ্গে প্রথমবারের মতো ১০ উইকেটে জয়ের কীর্তি গড়ে স্বাগতিকরা।

প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশ জিতেছিল, দ্বিতীয়টি বৃষ্টিতে হয় পরিত্যক্ত; সিরিজের ট্রফি তাই থাকছে স্বাগতিকদের কাছে। ১০২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নামা বাংলাদেশ খেলেছে নিজেদের মতো করেই। একটি রেকর্ড অবশ্য ছোঁয়া হয়নি। ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়েকে ৪৪ রানে অলআউট করেছিল বাংলাদেশ, সেদিন জয় এসেছিল ২২৯ বল হাতে রেখে। ওই রেকর্ড ভেঙে ফেলা সম্ভব হয়নি এদিন। কেননা জেতার সময় ২২১ বল হাতে ছিল বাংলাদেশের।

ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়া অধিনায়ক তামিম ইকবাল ৫ চার ও ২ ছক্কার ইনিংসে ৪১ বলে ৪১ রান করে অপরাজিত থাকেন। ৩৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি ছুঁয়ে অপরাজিত থাকেন লিটন দাস। এতে আয়ারল্যান্ডকে একটি তেঁতো হারের স্বাদ দেয় বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে ১০ উইকেটে হারে আইরিশরা।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের শুরুর দিকে দেখেশুনেই খেলে আয়ারল্যান্ড। বাংলাদেশের পেসার হাসান মাহমুদের বোলিং তোপের মুখে পড়ে আয়ারল্যান্ড। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন মিডিয়াম এই পেসার।

দলীয় ১২ রানে হাসান মাহমুদের বলে ব্যাটের কোনায় লেগে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন স্টিফেন দোহানি। ২১ বল খেলে ৮ রান করে বিদায় নেন এই ওপেনার। এরপর ইনিংসের নবম ওভারে আরেক ওপেনার পল স্টার্লিংকে এলবিডব্লিউর শিকার করেন হাসান মাহমুদ। দলীয় ২২ রানের মাথায় ১২ বলে ৭ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি।

একই ওভারের চতুর্থ বলে আইরিশদের টপ অর্ডার হ্যারি টেকটরকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ত্রাস সৃষ্টি করেছেন ডানহাতি এই মিডিয়াম পেসার। এরই মধ্যে তাসকিনের বলে একটি এবং হাসান মাহমুদের বলে আরও একটি ক্যাচ মিস হয়। তবে ঠিকই জ্বলে উঠেছেন দেশসেরা পেসার তাসকিন আহমেদ। ইনিংসের দশম ওভারে আইরিশ কাপ্তান অ্যান্ডি বালবির্নিকে প্রথম স্লিপে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ দিলে দলীয় ২৬ রান তুলতেই চারটি উইকেট হারিয়েছে আইরিশরা।

এরপর কার্টিশ ক্যাম্ফার আর লরকান টাকার ৫৭ বলে ৪২ রানের জুটি গড়ে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তবে এবাদত হোসেন টানা দুই বলে উইকেট তুলে নিলে আবারও ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। ইনিংসের ১৯তম ওভারে ৩১ বলে ২৮ করা সেট ব্যাটার লরকান টাকারকে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ করেন এবাদত। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ঠ হয়ে রিভিউ নিয়ে নেন টাকার। তবে কোনো লাভ হয়নি সফরকারীরাদের। সোজা প্যাভিলিয়নের পথে হাটা ধরেন তিনি।

পরের বলে জর্জ ডকরেলকে দাঁড়ানোর আগেই বোল্ড করে গোল্ডেন ডাক উপহার দেন এবাদত। একের পর এক উইকেট হারিয়ে অল্পতেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে আয়ারল্যান্ড। এরপর দলীয় ৭৯ রানের মাথায় তাসকিন আহমেদের করা ২২তম ওভারে তিন বলের ব্যবধানে দুই শিকার করে বাংলাদেশ।

তাসকিন আহমেদের শর্ট বলে অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন শর্ট মিডউইকেটে বড় শট খেলেন। তবে সফল হয়নি সেটি, খাড়া ওপরে উঠে নাসুম আহমেদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তিনি। এর ঠিক এক বল পর ফুললেংথ থেকে ভেতরের দিকে ঢোকা বল পর দারুণ এক বোলিংয়ে মার্ক এডেয়ারের ষ্ট্যাম্প ভেঙে দেন দেশসেরা এই পেসার।

একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন কার্টিস ক্যাম্ফার। তবে সঙ্গীর অভাবে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করছিলেন তিনি। দলীয় ৯৬ রানে হাসান মাহমুদের শর্ট বলে পুল করেছিলেন ক্যাম্ফার। তবে ডিপ ফাইন লেগে থাকা তাসকিন আহমেদকে পার করাতে পারেননি। তাতে ৪৮ বলে ৩৬ রান করে থেমেছেন ক্যাম্ফার।

এতে ১০০-এর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে আয়ারল্যান্ড। তবে হাসান মাহমুদকে কাভার ড্রাইভে চার মেরে প্রথম আন্তর্জাতিক স্কোরিং শটেই দলের রান ১০০ ছুঁইয়ে দেন ম্যাথু হামফ্রিস। তবে হাসান মাহমুদের বলে এলবিডব্লু হয়ে গ্রাহাম হিউমের বিদায়ে মাত্র ১০১ রানেই থামে আয়ারল্যান্ডের ইনিংস।

বোলিংয়ে বাংলাদেশের হয়ে একাই পাঁচ উইকেট নেন তরুণ পেসার হাসান মাহমুদ। এছাড়া পেসার তাসকিন আহমেদ ৩ ও এবাদত হোসেন ২ উইকেট শিকার করেন।

বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য ছিল মাত্র ১০২ রানের। সেই টার্গেটে ব্যাটিং করতে নেমে টাইগার কাপ্তান তামিম ইকবাল আর লিটন দাস মিলেই মাত্র ১৩.১ ওভারে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন।

লিটন দাস ক্যারিয়ারের নবম ফিফটি তুলে ৩৮ বলে ১০ বাউন্ডারিতে ৫০ রানে অপরাজিত থাকেন। এছাড়া ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল ৪১ বলে ৫ চার আর ২ ছক্কায় ৪১ করেন।

ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছেন পাঁচ উইকেট পাওয়া পেসার হাসান মাহমুদ। সিরিজ সেরার মুকুট উঠেছে প্রথম দুই ম্যাচে ১৪৪ রান করা মুশফিকুর রহিমের হাতে।