বিদেশি চলচ্চিত্র ও নাটক দেখা বা কারও সঙ্গে তা শেয়ার করার অপরাধেও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করছে উত্তর কোরিয়া। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের একটি প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

এতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে গত এক দশকে উত্তর কোরিয়া তাদের দেশের নাগরিকদের জীবনের সবকিছুর ওপরই কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘আজকের দুনিয়ায় আর কোনো দেশের মানুষই এতটা কড়াকড়ির মধ্যে নেই।

জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর শুক্রবার জানায়, কিম রাজবংশের শাসনামলে প্রযুক্তি-নির্ভর রাষ্ট্রীয় দমননীতি আরো তীব্র হয়েছে। গত সাত দশক ধরে তারা পরম ক্ষমতায় শাসন চালিয়ে আসছে এবং এর ফলে জনগণ দীর্ঘ ভোগান্তি, দমন এবং ভয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজকের পৃথিবীতে কোনো জনগোষ্ঠী এত সীমাবদ্ধতার মধ্যে নেই।

দেশ ছেড়ে পালানো এক সাক্ষী জানান, মানুষের চোখ ও কান বন্ধ করার জন্য তারা দমননীতি আরো জোরদার করেছে।

এটি ছিল এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, যার উদ্দেশ্য ছিল অসন্তোষ বা অভিযোগের সামান্যতম চিহ্নও মুছে ফেলা।
জাতিসংঘের উত্তর কোরিয়া মানবাধিকার কার্যালয়ের প্রধান জেমস হিনান জেনেভায় এক ব্রিফিংয়ে জানান, কোভিড-যুগের বিধিনিষেধের পর থেকে সাধারণ অপরাধ ও রাজনৈতিক অপরাধ উভয়ের জন্য মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা বেড়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘বিদেশি টিভি সিরিজ, বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় কে-ড্রামা ছড়িয়ে দেওয়ার অপরাধে নতুন আইনের আওতায় ইতিমধ্যেই অজ্ঞাত সংখ্যক মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে গণ-নজরদারি ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ঘটেছে, যা গত ১০ বছরে নাগরিকদের জীবনের প্রতিটি অংশকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় নিয়ে এসেছে।

হিনান আরো জানান, শিশুদেরও বাধ্যতামূলক শ্রমে নিযুক্ত করা হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে কয়লাখনি ও নির্মাণের মতো কঠিন খাতের জন্য গঠিত তথাকথিত ‘শক ব্রিগেড’-এ কাজ করা।

এই বিস্তৃত পর্যালোচনা প্রতিবেদনটি এক দশকেরও বেশি সময় পর প্রকাশিত হলো। এর আগে জাতিসংঘের একটি ঐতিহাসিক প্রতিবেদনে মৃত্যুদণ্ড, ধর্ষণ, নির্যাতন, অনাহার এবং ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষকে কারাগারে আটকে রাখার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো উঠে এসেছিল।

নতুন প্রতিবেদনে ২০১৪ সালের পর থেকে ঘটে যাওয়া পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে; যেখানে সরকারের নতুন আইন, নীতি ও প্রক্রিয়া গ্রহণের কথা বলা হয়েছে— যা দমননীতির জন্য আইনি কাঠামো প্রদান করছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যদি ডিপিআরকে (ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অব কোরিয়া) বর্তমান গতিপথে এগিয়ে চলে, তবে জনগণ আরো বেশি ভোগান্তি, নির্মম দমননীতি এবং ভীতির শিকার হবে।

জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন নিয়ে উত্তর কোরিয়ার জেনেভা মিশন এবং লন্ডন দূতাবাস এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।