দেশের স্বাধীনতা দিবসে জনগণকে করোনা সংক্রমণ থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র করোনা থেকে মুক্তির ‘দ্বারপ্রান্তে’ অবস্থান করছে।

৪ জুলাই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস। ১৭৭৬ সালের এই দিনে ব্রিটেনের রাজপরিবারের অধীনে থাকা এই দেশটি স্বাধীনতা ঘোষণা করে। এই ঘোষণার ২৪৫ তম বছর উদযাপনে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যকর্মী ও বিভিন্ন যুদ্ধে নিহত মার্কিন সৈন্যদের পরিবারের সদস্যসহ ১ হাজার মানুষকে হোয়াইট হাউসে নিমন্ত্রণ করেছিলেন জো বাইডেন।

আমন্ত্রিত অতিথিরা আসার পর হোয়াইট হাউসের লনে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আজ থেকে ২৪৫ বছর আগে, আমরা দূরবর্তী এক রাজার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলাম। আজ আমাদের প্রধান শত্রু করোনা এবং এই শত্রুর হাত থেকে মুক্তির দ্বারপ্রান্তে রয়েছি আমরা।’

‘প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বর্তমানে আমরা কিছুটা স্বস্তিদায়ক অবস্থানে আছি, কিন্তু এখনও একে পরাজিত করা যায়নি। আমরা সবাই জানি যে বর্তমানে এই ভাইরাসটির কিছু পরিবর্তিত ধরনের আগমন ঘটেছে, যেগুলো আগের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী; যেমন- ডেল্টা ধরন।’

‘আমার কথাকে অন্যভাবে নেবেন না….আমার মনে হয়, আরও কিছুদিন আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’

২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এ রোগে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে আক্রান্ত ও মৃত্যুর শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত, মৃত্যু ও সেরে ওঠাদের হালনাগাদ তথ্য প্রদানকারী ওয়েবাসাইট করোনাভাইরাস ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৩ কোটি ৪৫ লাখ ৯২ হাজার ৩৭৭ জন এবং মারা গেছেন মোট ৬ লাখ ২১ হাজার ২৯৩ জন।

জো বাইডেন দেশের প্রেসিডেন্টের পদে আসীন হওয়ার পর করোনা প্রতিরোধে দেশের জনগণকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা ও টিকাদান কর্মসূচীর ওপর ব্যাপক জোর দেন। চলতি বছর মার্চে তিনি ঘোষণা দেন, ২০২১ সালের ৪ জুলাই, ২৪৫ তম স্বাধীনতা দিবসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ১০ জন প্রাপ্তবয়স্কদের ৭ জনকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।

সে লক্ষ্য অবশ্য পূরণ হয়নি, তবে এই সময়সীমার মধ্যে দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশটির ৪৬ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক করোনা টিকার ২ ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ডেল্টা ধরনের প্রকোপ দেখা দেওয়ায় করোনায় আক্রান্ত-মৃত্যু ফের বাড়ার আশঙ্কা করছেন দেশটির জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্বের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের চিকিৎসা উপদেষ্টা অ্যান্থনি ফাউসি ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, ডেল্টায় সংক্রমণের হার দিন দিন বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে এবং এর প্রেক্ষিতে যারা এখন পর্যন্ত টিকার কোনো ডোজ নেননি, তাদের করোনার এই পরিবর্তিত ধরনে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঝুঁকির হার ৯৯ দশমিক ২ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের অবিলম্বে টিকার ডোজ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে ৪ জুলাই’র ভাষণে বাইডেন বলেন, ‘গত বছর পুরো সময় আমরা অন্ধকারাচ্ছন্ন দিন পার করেছি। এখন আমাদের সামনের দিকে তাকানোর সময়ে এসেছে। একটি উজ্জল ভবিষ্যৎ আমাদের ডাকছে।’