মৃত্যুদণ্ডাদেশ মাথায় নিয়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারের কনডেম সেলে বন্দি রয়েছে মোট দুই হাজার ১৬২ জন। আজ (সোমবার) ‘কারাগারসমূহে অবস্থানরত মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বন্দিদের তথ্য’ শীর্ষক কারা অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন কয়েদির এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের আদেশে এ প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে যে, সারাদেশের কারাগারগুলোতে সেলের সংখ্যা ২৬৫৭ টি। যার মধ্যে পুরুষ ২৫১২ ও মহিলা ১৪৫ টি। মোট দুই হাজার ৬৫৭টি সেলের মধ্যে বন্দি রয়েছে দুই হাজার ১৬২ জন। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পুরুষ বন্দির সংখ্যা দুই হাজার ৯৯ এবং মহিলা রয়েছে ৬৩ জন।
এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ সেল রয়েছে। এক হাজার ৭৮৪টি সেলের মধ্যে এ বিভাগে মোট বন্দি রয়েছে এক হাজার ২৯৫ জন। আর সর্বনিম্ন সেল রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। ওই বিভাগে ৫৪টি সেলের মধ্যে মোট বন্দি রয়েছে মাত্র পাঁচ জন। সেখানে কোনো মহিলা বন্দি নেই।
কারাগারের মধ্যে সর্বোচ্চ সেল রয়েছে হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে এক হাজার সেলের মধ্যে রয়েছে ৯৫১ জন বন্দি। তবে টাঙ্গাইল, গাজীপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, নীলফামারী, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, মাগুরা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, পটুয়াখালী, ভোলা ও ঝালকাঠিতে সেল থাকলেও কোনো বন্দি নেই। আর সেল নেই ঠাকুরগাঁও এবং কুড়িগ্রাম জেলায়।
বন্দীদের সুযোগ-সুবিধা বিষয়ে এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, কনডেম সেলের বন্দীদের কারা বিধি মোতাবেক নির্ধারিত ডায়েটে স্কেল অনুযায়ী খাদ্য প্রদান ও নির্ধারিত পোষাক প্রদানের পাশাপাশি নিয়মিত চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এছাড়া কারা বিধি মোতাবেক আত্মীয়-স্বজন ও আইনজীবীদের সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়। সেই সাথে ধর্মীয় শিক্ষা এবং বই পড়ার সুযোগ দেয়া হয়। আর ধূমপায়ীদের বিড়ি সিগারেট প্রদান করা হয়। এছাড়া বন্দীদের সেল সংলগ্ন আঙিনায় গোসল ও শরীর চর্চার সুযোগ দেয়া হয় এবং আপিল দায়ের সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পাদনে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়।
বিচারিক ও প্রশাসনিক ফোরামের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে দণ্ডিত ব্যক্তিকে কনডেমড সেলে রাখার বৈধতা চ্যলেঞ্জ করে রিট করেন মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত হয়ে কনডেমড সেলে থাকা তিন আসামি। এই রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
শুনানির পর হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে কারাগারের কনডেম সেলে রাখা কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। সেই সঙ্গে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের কনডেমে রাখা সংক্রান্ত জেল কোডের ৯৮০ বিধি কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়। এছাড়া হাইকোর্ট অন্তর্র্বতীকালীন আদেশে সারাদেশের কারাগারগুলোতে কনডেম সেলে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দির সংখ্যা ও কনডেম সেলের বন্দীদের কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় তা কারা মহাপরিদর্শককে প্রতিবেদন আকারে দিতে নির্দেশ দেন।