কোটা সংস্কার আন্দোলনে টানা কয়েকদিন ধরেই উত্তাল বাংলাদেশ। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থী। শুরুর দিকে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলেও গতকাল তাদের ওপর হামলা চালায় সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। এতে আহত হয়েছেন তিন শতাধিক আন্দোলনকারী। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর এমন হামলা নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
সোমবার (১৫ জুলাই) মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারকে। জবাবে তিনি বলেন, এই আন্দোলনের বিষয়ে অবগত আছে বাইডেন প্রশাসন।
এদিনের ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন এবং তাদের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে মেধাভিত্তিক নিয়োগের পক্ষে এবং কোটা বাতিলের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছে। ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী প্রতিবাদকারীদের হুমকি দেওয়ার পরই ক্ষমতাসীন দলের শাখা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করেছে এবং এতে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এমনকি যেসব আহত শিক্ষার্থী জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছিল হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে তাদের ওপরও হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। বাংলাদেশে চলমান ব্যাপক এই বিক্ষোভ নিয়ে আপনাদের অবস্থান কী?
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র অবগত রয়েছে। হামলায় শত শত মানুষ আহত হয়েছেন ও দুজন নিহত হয়েছেন। আমরা এই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।
তিনি আরও বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ যেকোনও বিকাশমান গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য ভিত্তি হিসাবে কাজ করে। আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে যেকোনও ধরনের সহিংসতার নিন্দা করি।
এছাড়া যারা এই সহিংসতার শিকার ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনাও প্রকাশ করেন ম্যাথিউ মিলার।
উল্লেখ্য, রোববার চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি’ বলা হয়েছে অভিযোগ করে রোববার রাত থেকে প্রতিবাদ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাতে প্রথমে রোকেয়া হলের মেয়ে শিক্ষার্থীরা হল থেকে মিছিল নিয়ে বের হয়ে আসেন। তারা স্লোগান দেওয়া শুরু করেন ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল থেকে ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীরা দলে দলে মিছিল নিয়ে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টার বিক্ষোভ শেষে হলে ফিরে যান তারা।
একই সময়ে (রোববার মধ্যরাতে) চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
একই ইস্যুতে আজ সোমবারও উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। দুপুরের দিকে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যে এসে অবস্থান নেন কয়েকশ আন্দোলনকারী। এসময় তারা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার চেয়ে নানা স্লোগান দেন। তবে তাদের ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আলাদা অনুষ্ঠানে তাদের স্লোগানের ভাষার তীব্র সমালোচনা করেন।
বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলা সংঘর্ষে শতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের অধিকাংশই ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া আশপাশের অন্যান্য হাসপাতালেও গেছেন কেউ কেউ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ হামলা চালানো বহু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। এছাড়া রাতে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।