মানুষের যেমন দুর্বলতা আছে তেমনি আছে শক্তিমত্তাও। নিজের সেই শক্তির জায়গা খুঁজে বের করতে পারলে যে কোনো অসম্ভবকে জয় করা সম্ভব। এমনটাই মনে করেন দুই পা ছাড়া এভারেস্ট জয় করার বিরল রেকর্ড গড়া হরি বুধা মাগার।
যুদ্ধক্ষেত্রে নিজের দু’টো পা হারান। তারপর সেনাবাহিনীতে আর জায়গা হয়নি। কিন্তু নকল পায়ের জোরেই বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট-এর চূড়ায় উঠলেন হরি।
২০১০ সালে আফগানিস্তান-ব্রিটিশ গোর্খার হয়ে যুদ্ধে দুই পা হারান হরি। তবে দমে যাননি তিনি। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিলেও অবসর নেননি স্বপ্নপূরণে। হরি বর্তমানে ইংল্যান্ডের ক্যান্টারবেরিতে বসবাস করেন। তবে তার জন্ম নেপালে। ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে উঠেছেন। কৃত্রিম পা নিয়ে জয় করেছেন বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট। গত শুক্রবার বিকেল তিনটার দিকে তিনি ২৯ হাজার ফুট চূড়ায় পৌঁছান।

৪৩ বছর বয়সী হরির ইতিহাস গড়ার পথটা অবশ্য সহজ ছিল না। তাকে পড়তে হয়েছে অনেক বাধার মুখে। ২০১৮ সালে এভারেস্ট জয়ের পরিকল্পনা ছিল তাঁর। কিন্তু ২০১৭ সালে নেপাল সরকার অন্ধ, দুই পা হারানো এবং একাকী অভিযানে যাওয়া ব্যক্তিদের এভারেস্টসহ পর্বতারোহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করলে অভিযান স্থগিত করতে বাধ্য হোন হরি বুদ্ধ মাগার। তবে এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে একটি পিটিশন দাখিল করা হলে নেপালের সুপ্রিম কোর্ট এটি বাতিল করে ২০১৮ সালে। আর এই রায় বুদ্ধ মাগারের এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন পূরণের পথ তৈরি করে।
১৭ এপ্রিল শুরু হয় কৃত্রিম পা নিয়ে হরির এভারেস্ট অভিযান। সকল বাধা পেড়িয়ে এই মাউন্টেন ক্লাইম্বার চূড়ায় পৌঁছান ১৯ মে। এই বিশ্বরেকর্ডধারীর দাবি, প্রবল ইচ্ছে শক্তি আর লক্ষ্যে অটুট থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।

এভারেস্ট জয়ী হরি বুধা মাগার বলেন, পৃথিবী সর্বোচ্চ চূড়ায় দাঁড়িয়ে আমার কেমন লেগেছিল? এই অনুভূতি অসাধারণ। প্রতিটা মানুষের নিজস্ব দুর্বলতা ও অক্ষমতা রয়েছে। তবে, সেসবকে পাশ কাটিয়ে আমাদের শক্তির জায়গা খুঁজে বের করতে হবে। আর সেটা পারলেই আমরা সবাই আরও ভালো ও অর্থবহ জীবন যাপন করতে পারবো।
তিনি বলেন, মৃত্যু পর্যন্ত শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে যাবো। তাদের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। আমি যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে সেটি যেন অন্যরা না হয়। যাদের হাত পা নেই তারাও যেন বাকিদের মতোই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে।

দুই পা বিহীন প্রথম এভারেস্ট জয়ী হলেও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে এই কৃতিত্ব অর্জনকারীদের মধ্যে প্রথম নন হরি। ১৯৯৫ সালে ডান পা ছাড়াই এভারেস্ট জয়ের কৃতিত্ব রয়েছে টম হুইটেকারের।