প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারও বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন যুক্তরাজ্যের মত অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে চায় এবং এ লক্ষ্যে সকলের সহযোগিতা কামনা করছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে স্থানীয় সময় শনিবার ক্লারিজ হোটেলের দ্বিপাক্ষিক সভা কক্ষে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লিভারলি এবং তার পতœী সুজানা স্পার্কস-এর অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি এই মন্তব্য করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে এবং প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র বোন শেখ রেহানাসহ অন্যরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে শেষে এক ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর বরাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমরা চাই সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। আমার দল সবসময় দেশে গণতন্ত্র বজায় রেখেছে। আমরা দেশের গণতন্ত্রকে একটি শক্তিশালী ভিত্তি দিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করেছে। কেউ যাতে নির্বাচনে কারচুপি করতে না পারে সেজন্য ছবিসহ ভোটার তালিকা এবং স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স তৈরি করা হয়েছে।
বিএনপি ভোট কারচুপির জন্য ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার যুক্ত করে ভোটার তালিকা তৈরি করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরির পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে যথেষ্ট স্বাধীন ও শক্তিশালী করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ওয়েস্টমিনিস্টারের আদলে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, যার অনুসরণে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্ব চালু করেছে।
ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দ্বিপাক্ষিক ওই বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়াও জলবায়ু, ব্যবসা-বাণিজ্যের মতো বেশকিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একই সময় তিনি রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
এ সময় ব্রিটিশ সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদে একটি বিল তুলেছে এবং রেজুলেশন পাস করতে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে বলেও উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ড. মোমেন বলেন, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লিভারলি রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লন্ডনে এলে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। এরপর থেকে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে।’
জেমস ক্লিভারলি বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর হয়েছে এবং দিন যতই এগিয়ে আসছে এ সম্পর্ক ততই জোরদার হচ্ছে।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। একই সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং রানীর সর্বদা প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানার খোঁজ-খবর নেওয়ার বিষয়টি স্মরণ করেন।
ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, কমনওয়েলথ লিডারস ইভেন্টের সময় শেখ হাসিনা রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী রাজাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং রাজা ইতিবাচক সাড়া দেন।
বিফ্রিংয়ে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার এম নজরুল ইসলাম ও যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
