কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ব্যাপক সহিংসতায় বন্ধ থাকা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধাপে ধাপে খোলা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এই কথা বলেন।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, আমরা আগেও বলেছি- যারা নিরপরাধ শিক্ষার্থী এবং যারা শান্তিপূর্ণভাবে এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে তারা কেউই যাতে কোনো ধরনের প্রশাসনিক হয়রানির শিকার বা আইনি জটিলতায় না পড়ে এ ঘোষণা দিয়েছি। যেসব শিক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবক যদি মনে করে তারা নিরপরাধ তারা অবশ্যই সেটা নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা সরাসরি তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেবো।

তিনি বলেন, আমাদের আজকের সভায় আইজিপিও বলেছেন- যেসব শিক্ষার্থীর বিষয়ে অভিযোগ থাকবে সেসব বিষয় তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিচ্ছেন তারা। যদি তারা নিরপরাধ থেকে থাকেন। তবে আমরা অভিভাবকদের বারবার বলছি যেখানে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হচ্ছে সেখানে নির্দিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা সঠিক তথ্য দেবেন।

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে আমরা বারবার বলছি জননিরাপত্তা সর্বাগ্রে। জননিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমরা সব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ধাপে ধাপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে চাই। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য আমাদের যে বিদ্যালয়গুলো আছে এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো আছে সেগুলোও নিরাপত্তা ঝুঁকি নিরুপণের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে। এ মুহূর্তে আমরা প্রতিদিন নিরাপত্তা ঝুঁকি নিরূপণ করছি। এগুলো বিবেচনায় নিয়েই আমরা যথাসময়ে জানিয়ে দেবো।

অনলাইনে ক্লাসের শুরুর বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইন্টারনেট যেহেতু সচল হয়েছে সেহেতু আমরা এ বিষয়টি বিবেচনায় নেবো। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি। বেসরকারি কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। সেটা আমরা যথাসময়ে জানিয়ে দেবো। এইচএসসি পরীক্ষা কখন হবে সেটাও আমরা যথাসময়ে জানিয়ে দেবো।

এর আগে, বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, কারফিউ, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ, চলমান বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এ আলোচনায় বসেছে সরকারের সাত মন্ত্রী, চার সচিব এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানরা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিত রয়েছেন।

বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব, বাণিজ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব এবং সুরক্ষা বিভাগের সচিব অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশপ্রধানসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা-সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে গত ১৯ জুলাই রাতে সারাদেশে কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েন করা হয়। পরে ২১ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। সহিংসতা দমনে সরকার অভিযান চালালে গত ২২ জুলাই থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। এরপর ক্রমেই বাড়ে কারফিউ শিথিলের সময়। ধীরে ধীরে খুলে দেওয়া হয় অফিস।