যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে লেকের পানিতে ডুবে দুই বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। গত রোবাবর (২৮ আগস্ট) দুপুরে আপস্টেটে বেথেল টাউনের হোয়াইট লেকে (সমুদ্র সংলগ্ন) গোসল করার সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আরো একজন অসুস্থ্য হয়ে  হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা গুরুতর।

নিহতরা হলেন যুক্তরাষ্ট্রস্থ কুমিল্লা জেলার বড়োরা উপজেলা এসোসিয়েশন’র উপদেষ্টা নিউইয়র্ক সিটির বেলরোজের বাসিন্দা রুহুল আমীনের (পেড্ডা গ্রাম অধিবাসী) জামাতা আফরিদ হায়দার (৩৪) ও ছোট ছেলে বাছির আমীন (১৮)।  ঘটনাস্থল থেকে রুহুল আমিনের ছোট মেয়ে নাসরিন আমীনকে (২১) গুরুতর অবস্থায় নিকটস্থ গারনেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিউইয়র্ক সিটি থেকে ১২০ মাইল দূর সুলিভান কাউন্টি দমকল বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৩ ব্যক্তি ডুবে যাবার সংবাদ জানার পরই ডুবুরিরা উদ্ধার অভিযান চালায় এবং তিনজনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েও আফরিদ এবং বাছিরকে বাঁচাতে পারেননি।

বড়োরা উপজেলা সমিতির সেক্রেটারি বদরুল হক আজাদ জানান, অবকাশ যাপনের অংশ হিসেবে লেকের ধারে একটি বাসা ভাড়া করেন আফরিদ হায়দার। স্ত্রী নাঈমা, শ্যালিকা-শ্যালকসহ পরিবারের সকলকে নিয়ে ২৭ আগস্ট ঐ বাসায় উঠেন । পরদিন  রোববার সকালে নাস্তা করার পর তিনজন লেকে নামেন। দু’তিন ঘন্টা তারা লেকের পানিতে আনন্দ- উল্লাস করার পর বাছির আমিন গভীর পানিতে ডুবে যায়। তাকে উদ্ধার করতে আফরিদ হায়দার এগিয়ে গেলে তিনিও ডুবে যান।

এসময় সমুদ্র সৈকতের সন্নিকটের এক বাসিন্দা বাছিরকে ডুবে যেতে দেখেন। তিনি টহল পুলিশকে জানান যে, তরুণটি পানিতে ডুবে গেলে একজন ঝাঁপ দেন তাকে উদ্ধারে। কিন্তু তিনিও ডুবে যেতে দেখে অপর তরুনী পানিতে ডুব দেন ওদেরকে উদ্ধারে। পুলিশকে ফোন করার মিনিট খানেকের মধ্যেই দমকল বাহিনীর ডুবুরিরা আসেন হোয়াইট লেক এবং কোনিউগা লেক এলাকা থেকে। পরে তিন জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে দুজন মারা যান।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এ সময়ে লেকের উপরিভাগের পানি কিছুটা উষ্ণ থাকলেও গভীরে খুবই ঠাণ্ডা থাকে। আর এতটাই ঠাণ্ডা যে তার সংস্পর্শে গেলে বাঁচার উপায় থাকে না। ভয়ংকর এমন অবস্থার কথা নবাগতরা জানেন না বলেই এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় হয়। সর্বশেষ সংবাদ অনুযায়ী নিহত ভগ্নিপতি ও শ্যালকের জানাজা স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বেলা দেড়টায় জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। এরপরই দাফন করা হয় লং আইল্যান্ডে ওয়াশিংটন মেমরিয়্যাল মুসলিম গোরস্থানে।

পরিবারের উদ্ধিৃতি দিয়ে বদরুল আজাদ আরো জানান, গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর আফরিদ হায়দারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন নাঈমা। তিনি বেঁচে গেলেও ঘটনার আকস্মিকতায় জ্ঞান ফারিয়ে ফেলেছেন। তাকেও ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। আফরিদ ছিলেন নিউইয়র্ক সিটির এস্টোরিয়ার বাসিন্দা আরজু হায়দার দম্পতির একমাত্র পুত্র সন্তান। তাকে হারিয়ে সকলেই গভীর শোকে কাতর পরিবারটি।