পশ্চিমা দেশগুলোকে বৈশ্বিক সংঘাতের ঝুঁকি সৃষ্টির জন্য অভিযুক্ত করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, কাউকেই বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশকে হুমকি দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। এদিকে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের মহড়া অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন।

পশ্চিমা সমর্থন থাকার পরও ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ সেনারা এগিয়ে চলেছে। এ পরিস্থিতিকে উল্লেখ করে পুতিন অভিযোগ করেন, ‘অহংকারী’ পশ্চিমা অভিজাত দেশগুলো নাৎসি জার্মানিকে পরাজিত করার ক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা ভুলে গেছে। তারা বিশ্বজুড়ে সংঘাত উস্কে দিচ্ছে।

রাজধানী মস্কোর রেড স্কয়ারে অনুষ্ঠিত বিজয় দিবসের ভাষণে বৃহস্পতিবার পুতিন বলেন, পশ্চিমাদের এ ধরনের উচ্চাকাঙ্খার অত্যধিকতা কোন পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে তা রাশিয়া জানে। বৈশ্বিক সংঘাত রোধে সবকিছুই করবে দেশটি তবে কারো কোনো হুমকি বরদাশত করবে না বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ রাশিয়া।

পুতিন বৃহস্পতিবার মস্কোর রেড স্কোয়ারে বলেন, ‘আমরা জানি এই ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার অত্যাধিকতা কোন দিকে নিয়ে যায়। রাশিয়া বিশ্বব্যাপী সংঘর্ষ প্রতিরোধে সবকিছু করবে। তবে একই সঙ্গে, আমরা কাউকে আমাদের হুমকি দেওয়ার সুযোগ দেব না। আমাদের কৌশলগত বাহিনী সবসময় যুদ্ধের প্রস্তুতির অবস্থায় থাকে। ২০২২ সালে রুশ সেনাবাহিনীকে ইউক্রেনে পাঠান পুতিন। সেই থেকে এই যুদ্ধ এখনো চলছে। দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধকে তিনি পশ্চিমের সঙ্গে (রাশিয়ার) লড়াইয়ের অংশ হিসেবে নিয়েছেন। ইউক্রেন এবং পশ্চিমারা বলছে, পুতিন সাম্রাজ্যবাদী ধাঁচে ভূখণ্ড দখলের কাজে নিয়োজিত। তারা চলমান এই যুদ্ধে রাশিয়াকে পরাজিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও বর্তমানে ক্রিমিয়া উপদ্বীপসহ ইউক্রেনের প্রায় ১৮ শতাংশ এবং পূর্ব ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করে রাশিয়া। রাশিয়া বলেছে, এসব ভূখণ্ড একসময় রাশিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল এবং এখন এগুলো আবারও রাশিয়ার অংশ হবে।

উল্লেখ্য, সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ২৭ মিলিয়ন লোককে হারিয়েছিল। যার মধ্যে ইউক্রেনের লাখ লাখ মানুষও ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নািস বাহিনীকে বার্লিনে হটিয়ে দেওয়া হয় এবং সেখানেই যেখানে হিটলার আত্মহত্যা করেছিলেন। এরপর ১৯৪৫ সালে রাইখস্ট্যাগের ওপরে লাল সোভিয়েত বিজয় ব্যানার উত্থাপিত হয়েছিল। এদিন পুতিন আরো বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শিক্ষা ভুলে যেতে চাইবে। তবে নািস জার্মানির পরাজয়র সঙ্গে জড়িত সমস্ত মিত্রদের সম্মান জানিয়েছে রাশিয়া। তিনি জাপানি সামরিকবাদের বিরুদ্ধে চীনা জনগণের লড়াইয়ের কথাও উল্লেখ করেন। তার ভাষায়, ‘তবে আমরা মনে রেখেছি—মস্কো এবং লেনিনগ্রাদ, রজেভ, স্ট্যালিনগ্রাদ, কুরস্ক এবং খারকিভের কাছে, মিনস্ক, স্মোলেনস্ক এবং কিয়েভের কাছে, মুরমানস্ক থেকে ককেশাস এবং ক্রিমিয়া পর্যন্ত ভারী, রক্তক্ষক্ষী যুদ্ধগুলোতে মানবজাতির ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।

অন্যদিকে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের মহড়া অস্বাভাবিক কিছু নয়, এটি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত বলে মন্তব্য করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বৃহস্পতিবার রুশ বার্তা সংস্থা তাস জানায়, পুতিন বলেছেন, কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের অনুশীলনে অস্বাভাবিকতার কিছুই নেই। এটি একটি পরিকল্পিত কাজ। ৭ মে ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে এ কথা বলেন তিনি। বেলারুশকে পরামর্শ দিয়ে পুতিন বলেন, রাশিয়ার পারমাণবিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে বেলারুশ। আমরা সবসময় তাদেরকে সঙ্গে রাখি। পুতিন আরো বলেন, এই মহড়া তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হয়। এর দ্বিতীয় ধাপে বেলারুশিয়ান সহকর্মীরা যৌথ মহড়ায় যোগদান করবেন।

বেলারুশিয়ান প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো বলেন, এটি তৃতীয় প্রশিক্ষণ অনুশীলন। রাশিয়ায় আমাদের বেশ কয়েক জন কর্মী রয়েছেন। তাই আমরা রাশিয়ার সঙ্গে মিলে কাজ করছি। তিনি আরো বলেন, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জানিয়েছেন, কর্মীরা ইতিমধ্যে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ শুরু করেছেন। রাশিয়া সোমবার বলে, সামরিক মহড়ার অংশ হিসেবে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের অনুশীলন করবে তারা। ফ্রান্স, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে হুমকির কথা বলে এই মহড়া চালাচ্ছে দেশটি।