গাজা সংঘাত শেষে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মার্কিন এই প্রস্তাবের প্রকাশ্য বিরোধিতা করেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এই খবর জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলের মিত্ররা এবং তার অনেক শত্রু দেশও ‘দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান’ নিয়ে আবারও নতুন করে চিন্তা করার আহ্বান জানিয়ে আসছে। এই সমাধান বাস্তবায়িত হলে একটি ইসরায়েলি রাষ্ট্রের পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রও থাকবে।
নেতানিয়াহু বলেন, জর্ডান নদীর পশ্চিমাঞ্চলের সব ভূখণ্ডে ইসরাইলের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। এটি সার্বভৌমত্বের ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
যদিও ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে। তবে তারা ইসরাইলকে গাজায় আক্রমণের তীব্রতা কমানোর আহ্বান জানিয়েছে এবং বলেছে, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরের দিনই স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়া উচিত।
নেতানিয়াহুর মন্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কিরবি বলেছেন, যুদ্ধের পরে গাজায় আবারও দখলদারি চলবে না। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এর আগে, এক সংবাদ সম্মেলনে গাজায় ‘সর্বাত্মক বিজয় না হওয়া পর্যন্ত’ হামলা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নেতানিয়াহু। এসময় তিনি আরও বলেছিলেন, হামাসের ধ্বংস এবং অবশিষ্ট ইসরায়েলি জিম্মিদের ফিরে আনতে ‘আরও কয়েক মাস’ সময় লাগতে পারে।
নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র গঠনের বিরোধিতা করেছেন। গত মাসে তিনি গর্ব করে বলেও ছিলেন, তিনি এর প্রতিষ্ঠা রোধ করতে পেরে গর্বিত।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গাজায় প্রায় ২৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। অঞ্চলটির মোট জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশই বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে তার নির্বিচার আক্রমণে লাগাম টানতে এবং যুদ্ধের টেকসই সমাপ্তির জন্য অর্থপূর্ণ আলোচনায় বসার জন্য তীব্র চাপ দেওয়া হচ্ছে।
অনেকে মনে করছিলেন বর্তমান সঙ্কট চলমান সহিংসতা চক্রের কার্যকর বিকল্প হিসেবে যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে কূটনীতিতে ফিরে যেতে বাধ্য করতে পারে। তবে নেতানিয়াহুর মন্তব্য একদম বিপরীত কথা বলছে।
৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণে হামাস হামলা করে যা দেশটির ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। ওই হামলায এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে কর্র্তপক্ষ। এসময় প্রতিরেক্ষা যোদ্ধারা প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি করে ধরে নিয়ে যায়। হামাসের হামলার পর ওইদিনই গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তখন দেশটির আত্মরক্ষার অধিকার আছে বলে এই হামলাকে সমর্থন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
তবে গাজায় দিন দিন মৃতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় এবং সেখানে ভয়াবহতার দৃশ্য দেখে ইসরায়েলিদের সংযমের আহ্বান জানিয়েছে পশ্চিমা সরকারগুলো। হোয়াইট হাউস বারবার ইসরায়েলের সামরিক নীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। তারা ইসরায়েলকে নির্বিচারে বিমান হামলার পরিবর্তে আরও নির্ভুল ও নির্দেশিতভাবে অস্ত্র হামলার আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে এই সংঘাত বন্ধে একটি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের আহ্বানও জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।