চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুন লেগেছে। শনিবার দিনগত রাতে লাগা আগুন এখনও জ্বলছে। কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছেনা। এসময় বিস্ফোরণও ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ৯ কর্মীসহ ৪৯ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে দুই শতাধিক মানুষ।
ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে বাংলাদেশ। বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, আল-জাজিরা, রয়টার্স এনডিটিভিসহ একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে গুরুত্বসহকারে এসেছে ঘটনাটি।
বিবিসি শিরোনাম করেছে ‘বাংলাদেশে অগ্নিকাণ্ড: ডিপোয় বিস্ফোরণে নিহত ৪০ জনের বেশি, আহত শতাধিক’। তাদের অনলাইনের মূল্য প্রচ্ছদে থাকা সংবাদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এবং বিস্ফোরণে অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া কয়েকশ’ আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে বলা হয়েছে।
বিবিসি বলেছে, ডিপোতে থাকা কয়েকটি কনটেইনারে রাসায়নিক পদার্থ ছিল। বাংলাদেশে শিল্পকারখানায় অগ্নিকাণ্ড সাধারণ একটি ব্যাপার। আর এই জন্য দুর্বল নিরাপত্তা নিয়ম-নীতিকে দায়ী করা হয়। ঘটনাস্থলের আশপাশের হাসপাতালগুলো আহত লোকজনে উপচে পড়ছে এবং লোকজন চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছে। চিকিৎসকরা রক্ত দিতে স্বেচ্ছাসেবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এবং আহতদের চিকিৎসায় সামরিক হাসপাতালগুলো সাহায্য করছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরেও ৪৯ জনের মৃত্যুর তথ্য দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ৩০০ জনের বেশি গুরুতর আহত। ডিপোতে বিস্ফোরণের সময় সেখানে ছিলেন ট্রাকচালক তোফায়েল আহমেদ। এএফপিকে তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের ফলে আমি প্রায় ১০ মিটার দূরে ছিটকে পড়লাম। আমার হাত-পা পুড়ে গেছে।’ আর ফায়ার সার্ভিসের সাবেক কর্মকর্তা ভারত চন্দ্র এএফপিকে বলেছেন, বাংলাদেশে এর আগে কোনো ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের এত বেশিসংখ্যক কর্মীর মৃত্যু হয়নি।
আল-জাজিরার দেওয়া হতাহতের তথ্য এএফপির মতোই। ‘বাংলাদেশ: কনটেইনার ডিপোতে প্রাণঘাতী আগুন ও বিস্ফোরণ’ শিরোনামের খবরে তারা বলছে, আগুনে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী রয়েছেন। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে থাকা অন্তত ২১ জন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী আহত হয়েছেন।
সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। গত বছরের ডিসেম্বরে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে একটি লঞ্চে আগুন লেগে কমপক্ষে ৩৮ জন নিহত হন। এর কয়েক মাস আগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি কারখানায় আগুন লেগে অন্তত ৫২ জন মারা যান।
অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহ সব ছবি প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তাদের খবরেও আগুনের ঘটনার খুটিনাটি তুলে ধরা হয়েছে। আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া আফজাল হোসেনের চাচাতো ভাই সাখাওয়াত হোসেন রয়টার্সকে বলেন, ‘আমার ভাইকে হারালাম। তার (আফজাল) বাবা মারা গেছেন মাত্র ১০ মাস আগে। ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট, তাতে কী, মায়ের খেয়াল সে একাই রাখত। এখন তার মা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। কোনো কিছুতেই তাঁকে শান্ত করা যাচ্ছে না।’
বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো ও বিভিন্ন বার্তা সংস্থার বরাত দিয়ে সীতাকুণ্ডের আগুনের খবর তুলে ধরেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে তাদের খবরে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। অন্যদিকে সীতাকুণ্ডের আগুনে ৩৮ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাদ্যম ডন।