প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উপলক্ষ্যে মুখোমুখি টেলিভিশন বিতর্কে অংশ নিয়ে একে অন্যকে মিথ্যাচারের দায়ে অভিযুক্ত করেছেন কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া রাজ্যের ফিলাডেলফিয়ায় স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৯টায় এই নির্বাচনী বিতর্কে মুখোমুখি হন কমলা ও ট্রাম্প।
৯০ মিনিটের এই বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলো মার্কিন গণমাধ্যম এবিসি নিউজ এবং বিতর্কের সঞ্চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাংবাদিক ডেভিড মুইর ও লিনসে ডেভিস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে এই প্রথম কমলা ও ট্রাম্প মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নিলেন।
বিতর্কে অর্থনীতি, অভিবাসন, গর্ভপাতসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। এসব বিষয়ে কমলা ও ট্রাম্প পরস্পরকে আক্রমণ করেন। এমনকি তাঁরা পরস্পরের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারেরও অভিযোগ তোলেন।
বিতর্কের এক পর্যায়ে সঞ্চালক ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যরিসকে প্রশ্ন করেন ‘আপনি কি বিশ্বাস করেন যে আমেরিকানরা চার বছর আগের চেয়ে ভালো আছে?
উত্তর হ্যারিস বলেন, ‘অর্থনীতিতে তিনি সবার জন্য সুযোগ তৈরি করতে চান। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, যারা নতুন পারিবারিক জীবন শুরু করেছেন তাদের জন্য আবাসনের খরচ কমিয়ে আনতে চান। এসময় ট্রাম্পকে আক্রমণ করে কমলা হ্যারিস বলেন ট্রাম্প ‘আগে যা করেছেন তা করার’ এবং ‘ধনকূবের এবং করপোরেশনগুলোর জন্য ট্যাক্স কাটছাঁট’ করার পরিকল্পনা করেছেন। তিনি বলেছেন, যে করের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের নীতিতে আমেরিকানরা ‘নিত্যদিনের পণ্যের’ উপর কর দিতে বাধ্য হবে।
কমলা হারিসের তীব্র সমালোচনার জবাব দেন ট্রাম্প। তিনি অন্য দেশের ওপর শুল্ক বসানোর পরিকল্পনার কথা জানান। চীনের প্রসঙ্গ টেনে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, তার প্রশাসন দেশটির কাছ থেকে ‘বিলিয়ন’ শুল্ক এনেছিল। এমনকি ক্ষমতা ছাড়ার পরও শুল্ক এসেছে।
কমলা দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের জন্য তিনি একটা সুবিধাজনক আর্থিক নীতি চালু করবেন।
ট্রাম্পের পাল্টা অভিযোগ, ‘কমলা বাজেটে পুলিশের জন্য বরাদ্দ কমাতে চান, সবার কাছ থেকে বন্দুক কেড়ে নিতে চান।’
কমলা বলেন, তার কাছে ও তার রানিংমেট ওয়ালজের কাছে অনুমোদিত বন্দুক আছে। নিজের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য তিনি বন্দুক রেখেছেন। ‘আমরা কারও কাছ থেকে বন্দুক কেড়ে নিচ্ছি না’, যোগ করেন তিনি।
ট্রাম্প ও কমলা দুজনের কাছ থেকেই জানতে চাওয়া হয়, তারা কীভাবে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ থামাবেন?
কমলা তার আগের অবস্থানের কথা আবার জানিয়ে বলেন, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। গতবছর ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে ঢুকে এক হাজার দুইশ মানুষকে হত্যা করেছিল।
তিনি বলেন, এখন যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। গাজায় সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। সেই সঙ্গে যাদের জিম্মি করে রাখা হয়েছে, তাদের মুক্তি দিতে হবে।
কমলা বলেছেন, ‘আমাদেরকে “দুই রাষ্ট্র” সমাধানের পথেই যেতে হবে। এর ফলে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।’
ট্রাম্পের দাবি, তিনি প্রেসিডেন্ট থাকলে এই যুদ্ধ শুরুই হতো না। তার অভিযোগ, কমলা ইসরায়েলকে ঘৃণা করেন। কমলা প্রেসিডেন্ট হলে দুই বছরের মধ্যে ইসরায়েল বলে কোনো দেশ থাকবে না—এমন দাবি করেন ট্রাম্প।
‘কমলা আরবদেরও ঘৃণা করেন। আমি প্রেসিডেন্ট হলে দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান করে ফেলব’, অঙ্গীকার করেন ট্রাম্প।
ডিবেটে কমলা বেশ কয়েকবার উল্লেখ করেন, তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন। তিনি ইসরায়েলের নিরাপত্তার অধিকার সমর্থন করেন। তার পাল্টা দাবি, বিশ্বনেতারা ট্রাম্পের কথায় হাসছেন।
ট্রাম্প দাবি করেন, ‘আমি এই যুদ্ধ বন্ধ করতে চাই। আমি মানুষের জীবন বাঁচাতে চাই। বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনে রাশিয়াকে আগ্রাসন চালাতে দিয়েছে।’
ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘আপনি কি চান, ইউক্রেন যুদ্ধে জিতুক?’
ট্রাম্প এই প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
কমলার অভিযোগ, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে তিনি পুতিনকে ইউক্রেন দখল করে নিতে দেবেন। কমলা বলেন, ‘ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে পুতিন এতক্ষণে কিয়েভে বসে থাকতেন। তার নজর থাকত বাকি ইউরোপের দিকে।’
কমলা বলেন, ‘ইউরোপীয় নেতারাও চান না, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হোন।’
কমলা বিতর্ক শেষ করেন এইভাবে, ‘আমরা আর পেছনে ফিরে যেতে চাই না। আমরা সামনের দিকে তাকাতে চাই। আমরা নতুন পথে হাঁটতে চাই।’
ট্রাম্প বলেন, ‘কমলা ছিলেন বাইডেন প্রশাসনের অংশ। তিনি মানুষকে চাকরি দিতে পারেননি, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। তার উচিত, এখনই সরে দাঁড়ানো।’
আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে লড়তে চেয়েছিলেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ৮১ বছর বয়সী বাইডেন গত ২৭ জুন রাতে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টায় সিএনএনের স্টুডিওতে রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নির্বাচনী বিতর্কে অংশ নেন।
বিতর্কে ট্রাম্পের কাছে ধরাশায়ী হন বাইডেন। তাঁর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য তাঁর ওপর চাপ বাড়ে। চাপের মুখে তিনি গত ২১ জুলাই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে দলের নতুন প্রার্থী হিসেবে তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের প্রতি সমর্থন জানান তিনি।
গত ১৮ জুলাই মিলওয়াউকিতে রিপাবলিকান পার্টির সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন গ্রহণ করেন ট্রাম্প। আর গত ২২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় ডেমোক্রেটিক পার্টির চার দিনের জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনে কমলা আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় মনোনয়ন গ্রহণ।