বিদেশিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ রক্ষা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা। রাজধানীতে কালো পতাকা মিছিলে অংশ নিয়ে এবার কারচুপির নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দেন তারা। বিএনপি নেতারা বলেন, জনগন আজ ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ, রাজপথের আন্দোলনেই তাদের পরাজিত করা হবে।
সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে ঢাকার একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পদযাত্রা ও গণমিছিলের পর এবার কালো পতাকা মিছিল করেছে বিএনপি’র ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা। আজ শুক্রবার (২৫শে আগস্ট) বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে মিছিলে অংশ নেয় নগরীর বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ডের হাজার হাজার নেতাকর্মী।
রাজধানীর শ্যামলী মাঠের সামনে থেকে শুরু হয় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র কালো পতাকা মিছিল। এর উদ্বোধনী সমাবেশে দলের সিনিয়র নেতারা বলেন, দেশ চালাতে ব্যর্থ হয়ে জনরোষ দমানোর জন্য সরকার বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ওপর গ্রেপ্তার-নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশের মানুষের কাছে পরিত্যক্ত হয়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে এখন বিদেশে ধর্না দিচ্ছে।
একইসময়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার কালো পতাকা মিছিল। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে অংশ নিয়ে বিএনপি নেতারা বলেন, ক্ষমতাসীনদের সরাতে না পারলে দেশের অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়বে।
পরে শুরু হয় পতাকা মিছিল। মির্জা আব্বাসসহ সিনিয়র নেতাদের নেতৃত্বে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার মিছিলটি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ফকিরাপুল, আরামবাগ, মতিঝিল শাপলা চত্বর, ইত্তেফাক মোড়, রাজধানী সুপার মার্কেট হয়ে পুরনো ঢাকার নারিন্দায় গিয়ে শেষ হয়।
এসময় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকারের ভেতর ধারণা সৃষ্টি হয়েছে, তারা ক্ষমতা ছাড়লে তাদের মারধর করা হবে, তাদের বাড়িঘরে হামলা হবে। ভয়ের কারণ নেই। বিএনপি গণমানুষের দল। আপনাদের (আওয়ামী লীগ) মতো দানবের দল নয়। আমাদের বিবেক বুদ্ধি আছে। তবে, যে অন্যায় অত্যাচার করেছেন এর জন্য দেশের ১৮ কোটি মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে কি না জানি না।
তিনি বলেন, আমরা ভাগ চাই না। ভোটের অধিকার চাই। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জনগণ আপনাদের ভোট দেবে না, এ বিশ্বাস আপনাদের (সরকার) মনে এলো কি করে? কারণ, আপনারা দেশের টাকা লুট করেছেন। দেশের তরুণ সমাজ আজ বেকার। ১০ লাখ কোটি টাকা লুট করেছেন। তা লুট না করে যদি দেশে শিল্প কারখানা করতেন তাহলে উল্টো বিদেশিরা আমাদের দেশে কাজ করতে আসত।
তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষ আজ অর্ধাহারে কিংবা অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। তারা আরেক দিকে অধিকার হারা। পুলিশ দিয়ে টিয়ার শেল ও গুলি করে আপনাদের ক্ষমতা রক্ষা করতে পারবেন না। পুলিশের দায়িত্ব জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। অথচ পুলিশ আজ লুটেরাদের পাহারা দিচ্ছে। চোর ডাকাতদের পাহারা দিচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আমরা এখন আর মৃত্যুকে ভয় পাই না। মরণের শপথ নিয়ে মাঠে নেমেছি। জেলে নিয়ে গুলি করে বিএনপিকে দমন করা যাবে না। আইয়ুব-ইয়াহিয়াও নিরস্ত্র জনগণের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। বন্দুক তাক করে লাভ নেই। আমার ওপরও বন্দুক তাক করেছিলেন। ভোট চুরির জন্য আজ সারাবিশ্ব আপনাদের ধিক্কার জানাচ্ছে। জনগণের ক্ষোভ চূড়ান্ত পর্যায়ের যাওয়ার আগে ক্ষমতা থেকে কেটে পড়ুন, না হলে জনগণ আপনাদের ছাড়বে না।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত এ কালো পতাকা মিছিলের আগের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম। ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক লিটন মাহমুদ ও আনম সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য আরও দেন ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।