সরকারিখাতে অপচয় কমানো ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ মঙ্গলবার সকালে আগারগাঁওয়ে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ নির্দেশ দেন তিনি।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন এই মুহূর্তে মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই বড় সমস্যা। সরকারি প্রকল্পে অহেতুক ব্যয় ও অপচয় বন্ধে আবারও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে রোগ পরীক্ষার যন্ত্র চালানোর লোক থাকে না কেনো এনিয়েও ক্ষোভ জানান প্রধানমন্ত্রী। আগামীতে এসব বিষয়ে সর্তক থাকার নির্দেশ দেন তিনি।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমলাতন্ত্র নিয়ে প্রধানমন্ত্রী খুশি। সবাই ভালো কাজ করছেন। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি কমানো ও প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানোর তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
কোভিড মহামারীর প্রভাব কিছুটা কমে যাওয়ার পর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেয়। দেশে দেশে মুদ্রার দরপতন, আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়া, কাঁচামালের মূল্য বাড়াসহ বিভিন্ন কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়।
এর প্রভাব পরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও। চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ সংকট তৈরি হওয়ায় ডলারের দামে রেকর্ড হয়। ফলে ডলারের বিনিময়ে টাকার মান নিয়মিতভাবে কমা শুরু করে।
এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের জুন মাস থেকে খরচ কমানোর জন্য বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া শুরু করে সরকার।
খুব গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন সব প্রকল্পের ব্যয় স্থগিত করা, বিদেশ সফর স্থগিত করা, বিলাসপণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা, আমদানির ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন বাড়িয়ে দেয়া, বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনাসহ আরও কিছু সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে এসেছে। সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রেও লাগাম টানা হয়। ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যয় কমানোরর ওপরও জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই নির্দেশনাই আবারও মঙ্গলবারের একনেক সভায় তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে এম এ মান্নান বলেন, চলমান সব প্রকল্প উচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে শেষ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া যেখান থেকে কম সুদে ঋণ পাওয়া যাবে আমরা সেখান থেকে নেবো।
একনেক সভায় ১৪ হাজার ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একইসাথে আরও পাঁচটি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এছাড়াও সাতটি প্রকল্পের বিষয়ে একনেক সভায় অবহিতকরণের জন্য উত্থাপন করা হয়। যা পরে অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, যে প্রকল্পগুলো ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কাজ হয়েছে সেগুলোকে উচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে শেষ করতে হবে। ঋণের প্রয়োজনে নতুন জানালা খুলেছে বলে জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে নিউ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া যাবে। তাহলে এখন আমরা দর দাম করে ঋণ নিতে পারবো। এখন আমাদের এডিবি, বিশ্বব্যাংক, এআইআইবি এবং নিউ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক; যেখান থেকে সহজ শর্তে ঋণ পাবো সেখান থেকে আমরা ঋণ নেবো।
তিনি বলেন, নালা বা পুকুরের নিচে পাকা না করার নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ এতে পানি নিচে যেতে পারে না। এছাড়া স্লুইস গেট করার ক্ষেত্রে সতর্ক করেছেন। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, স্লুইস গেট যারা করে তারা চলে যায়। আর যারা দায়িত্বে থাকেন তাদেরও খুঁজে পাওয়া যায় না। এছাড়া প্রকল্পে গুরুত্ব দিয়ে সবুজ বেষ্টনী করতে বলেছেন। ক্লাইমেট ফান্ড থেকে অর্থ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।